জাতীয়

সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টিনে ৯ হাজার, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা

By Daily Satkhira

March 20, 2020

দেশের খবর: নভেল করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন, মারা গেছেন একজন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। এমনকি যিনি মারা গেছেন তিনিও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তার মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন দুই হাজার ৬৯৮ জন, আর গত ২১ জানুয়ারি থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মোট ৯ হাজার ১৩ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা স্থানীয়ভাবে ছড়াতে শুরু করেছে নভেল করোনা ভাইরাস। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে না পারলে এ রোগের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯) মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ নতুন রোগীর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, নতুন আক্রান্ত হওয়া তিন জন একই পরিবারের সদস্য। একই পরিবারের হওয়ায় বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

হোম কোয়ারেন্টিন করা মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাদারীপুরের শিবচরকে লকডাউন করার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কোয়ারেন্টিনের জন্য বিশ্ব ইজতেমা মাঠকে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রোগীর সংস্পর্শে যাওয়াতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৪ চিকিৎসক, বেসরকারি হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসায় ১ চিকিৎসক এবং একজন নার্সকে আইসোলেশনে এবং অন্তত ১৫ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এসব রোগীদের থেকে আরও কতজন চিকিৎসকসহ অন্যরা সংক্রামিত হয়েছেন সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। আর এটা বোঝা না গেলে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে যাবে। তখন পুরো দেশ ঝুঁকিতে পড়বে।

এ ঝুঁকির কথা স্বীকার করেছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাও। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আক্রান্তরা যে উপজেলার বাসিন্দা, সেখান থেকে যেন রোগটি ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেজন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে না পারলে এ রোগের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করার উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কৌশল হলো—দ্রুত রোগীকে শনাক্ত করে তাকে সবার থেকে আলাদা করে ফেলা। তবে রোগের উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে বসে থাকলে করোনা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যদি হয় সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যদি সাবধানতা না নেওয়া হয় অর্থাৎ যে পরিবারের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে তাদের যদি বিচ্ছিন্ন করে রাখতে না পারি তাহলে এটা ছড়িয়ে যাবে, তবে প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলেও তারা ভাইরাসের ক্যারিয়ার হতে পারেন। তারা ক্রমাগতই ছড়িয়ে পড়ছেন, এতে করে পুরো দেশ কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকিতে পড়বে।

চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান বলেন, ইতোমধ্যে দেখেছি, যেসব দেশের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়া শুরু করেছিল, সেসব দেশ থেকেই বাংলাদেশিরা এসেছেন বেশি। কমিউনিটি লেভেলে হয়তো এটা ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি জানিয়ে আতিক আহসান বলেন, যদিও সরকার এখন অনেক কিছুই করছে, কিন্তু তার আগেই ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমার আশঙ্কা।

কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে—মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, একজন ইনফেক্টেড রোগী থেকে গড়ে দুই থেকে তিনজন সংক্রমিত হতে পারে। সে দুই-তিনজন থেকে আরও ছড়াবে—যদি এটাকে থামানো না যায় তাহলে স্থানীয় সংক্রমণের বিষয়টি এভাবেই চলতে থাকবে।

আগে তিন ফিট বা এক মিটার বলা হলেও করোনার ক্ষেত্রে সেটা ছয় ফিট বলা হচ্ছে মন্তব্য করে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, কোনও আক্রান্ত রোগীর ছয় ফিট বা দুই মিটারের মধ্যে এবং ১৫ মিনিটের বেশি কেউ থাকে তাহলেই তার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার যদি টেবিল, দরজার হাতলে, লিফটের বাটনে, কোনও সুইচে হাঁচি, কাশি হয় এবং সেগুলো যদি আরেকজন লোক স্পর্শ করে সেখান থেকেও তিনি সংক্রমিত হতে পারেন। এভাবেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হয়।