আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাস: ইতালি-স্পেন-আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না

By Daily Satkhira

March 28, 2020

বিদেশের খবর: নভেল করোনাভাইরাসে একদিনে এত মৃত্যু ‍আগে কখনও দেখেনি ইতালি ও স্পেন; ইতালিতে মারা গেছে ৯৬৯ জন আর স্পেনে ৭৬৯ জন। ইউরোপের এই দুই দেশে মৃত্যুর মিছিল বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যাকেও ২৫ হাজার ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।

ইতালিতে রেকর্ড মৃত্যুর পরও দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সতর্ক করেছেন, এই ভাইরাস সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি।

ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬৯ জনের মৃত্যুতে শুক্রবার রাত নাগাদ দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৩৪ জনে।

এই সময়ে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে চার হাজার ৪০১ জনের, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৪৯৮ জনে।

অন্যদিকে স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭ হাজার ৮৭১ জনের এই ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৫৯ জনে।

আর এই ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৯ জনের মৃত্যুতে স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮৫৮ জনে।

ইতালির সুপারিয়র হেলথ ইনস্টিটিউটের প্রধান সিলভিও ব্রুসাফেরো বলেছেন, আক্রান্তের সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে নতুন সংক্রমণের হার ‘কমছে’, যা গৃহীত কঠোর পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এসব বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলে অবস্থা খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, “আমরা এখনও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাইনি।”

পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতেই প্রথম মানুষের চলাচল সীমিত করা হয় এবং এই বিধি-নিষেধ ৩ এপ্রিলের পরেও বাড়ানো হবে বলে দেশটির কর্মকর্তারা শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইউরোপে ইতালির পরে নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশ স্পেনের সরকার জরুরি অবস্থা অন্তত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। দেশটিতে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দোকান ও ব্যবসা-বাণিজ্য।

স্পেনের নার্সিং হোমের বাসিন্দারাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির ৯০০ নার্সিং হোমে অন্তত এক হাজার ৫১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নার্সিং হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র জীবাণুমুক্ত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

দেশটিতে ৯ হাজার ৪৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েক দিন ধরে চিকিৎসক ও নার্সরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছে।

এদিকে স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন থেকে আমদানি করা স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ৯ হাজার কিট ত্রুটিপূর্ণ। সেগুলো আর ব্যবহার করা হচ্ছে না।

যুক্তরাজ্যেও এদিন একদিনে সবচেয়ে সংখ্যকের মৃত্যু। নতুন ১৮১ জনকে নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫৯ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৭৯ জন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক শুক্রবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি অতি উচ্চ মাত্রায় বলে সতর্ক করেছেন। দেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হওয়া মহামারী এখন প্যারিস অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফ্রান্সের হসপিটাল ফেডারেশন বলছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী প্যারিসের হাসপাতালগুলো রোগী ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফ্রান্সে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ১৫৫ জন, তাদের মধ্যে এক হাজার ৬৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৬ বছরের জুলি এ ফ্রান্সে সবচেয়ে কম বয়সে এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর সবার উপরে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৮৫ হাজার ৫০০ জনের এই রোগ ধরা পড়েছে, প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৩০০ মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে নিউ ইয়র্ক, তবে নিউ অরলিন্স, শিকাগো ও ডেট্রোয়েটেও দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, ওমান, কুয়েত ও মিশনে শুক্রবার ২৬৯ জনের করোনাবভাইরাস ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯২ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এদের নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৪ জন।

ইরাকের কর্মকর্তারা গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে, সে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮৫ জনে। এই সময়ে চারজনের মৃত্যুতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে।

লেবাননে নতুন শনাক্ত হয়েছে ২৩ জন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯১ জনে। নতুন একজনের মৃত্যুতে মোট মৃত্যু সাতজনের।

ওমানে নতুন রোগী ২২ জন, মোট আক্রান্ত ১৩১। কুয়েতে নতুন শনাক্ত ১৭ জনকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৫ জনে। আর মিশরে নতুন করে ৩৯ জন শনাক্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯৫ জনে, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছে পাকিস্তানে ১ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১০ জন। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা পাকিস্তানের চেয়ে কম (৭২৪) হলেও মারা গেছে ১৭ জন।

বাংলাদেশে ৪৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু ঘটেছে।