দেশের খবর: আমোদ-প্রমোদ আর তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসার আয়ে বিলাস-ব্যসনে চলা বহিষ্কৃত যুব মহিলা নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া জ্বরে আক্রান্ত হওয়াতে রিমান্ড শেষ না করেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) করোনাভাইরাস সন্দেহে পাপিয়ার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে। সেখানে ফলাফল নেগেটিভ (করোনা নেই) আসে। এরপর জ্বরে আক্রান্ত পাপিয়াকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নারী ওয়ার্ডে রাখলেও আলাদা করে রাখা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করছে।
এখন নির্জন কারাকক্ষে দিন কাটছে পাপের সাম্রাজ্যের এই সম্রাজ্ঞীর। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে র্যাবের রিমান্ডের মাঝপথে তাকে কাশিমপুর কারাগারের হাজতে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘রিমান্ডের তৃতীয় দিন থেকেই তার জ্বর ছিল। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না সেটা পরীক্ষাও করা হয়েছে। পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। আমরা এরপরই তাকে কারাগারে ফেরত পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হলে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে।’
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জ্বরে আক্রান্ত পাপিয়াকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নারী ওয়ার্ডে রাখলেও আলাদা করে রাখা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা করছে।’
এদিকে, কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সংবেদনশীল আসামি হওয়ায় পাপিয়াকে রাখা হয়েছে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ একটি সেলে। তার সঙ্গে আর কোনো বন্দি নেই। দিন-রাত একাকি কাটে ছোট্ট কক্ষের চার দেয়ালে। মাঝে মাঝে বই পড়তে দেখা যায় তাকে। বাকি সময় শুয়ে-বসে আর ঘুমিয়েই কাটান একসময়ের পাঁচতারকা হোটেলের বিলাসী গ্রাহক পাপিয়া।
বন্দি সেলে পাপিয়ার কারও সঙ্গে সেভাবে মেলামেশার সুযোগ নেই বলে জানায় কারা সূত্র। তাকে আলাদা রাখা হয়েছে। তিনি (পাপিয়া) নতুন বন্দি হিসেবে এই জেলে এসেছেন। এখনো তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ দেখা করতে আসেনি। তাছাড়া করোনাভাইরাসের বিশেষ পরিস্থিতির জন্য আপাতত এই কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে।
এত যে অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন পাপিয়া, তার মধ্যে কি কোনো অনুশোচনার লক্ষণ দেখা যায়- জানতে চাইলে কারা সূত্র জানায়, ‘না, তার মধ্যে কোনও অনুশোচনা বোধ নেই। তবে মাঝেমধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন। বিলাসবহুল চলাচলে অভ্যস্থ পাপিয়ার এই বন্দি পরিবেশ মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
যুবলীগের হিষ্কৃত এই নেত্রী গ্রেপ্তারের আগে গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে মাসে বিল গুনতেন কোটি টাকা। সব সময় সঙ্গে থাকত সাতজন অল্পবয়সী তরুণী। আর আনাগোনা ছিল সমাজের নানা পর্যায়ের ‘এলিট’ মানুষের।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের (বর্তমানে আজীবন বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ও দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও কাজী তায়্যিবা নূরসহ দেশত্যাগের সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। ধরা পড়ার পর তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করে র্যাব। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রেখেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর তথ্য বেরিয়ে আসে, গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট সাড়ে ৪ মাস ধরে ভাড়া ছিল পাপিয়ার কাছে। এ সময়ে হোটেলটির কক্ষ ভাড়া, মদের বিল, খাবারের খরচসহ আনুষঙ্গিক মোট বিল হয়েছিল তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করেন আড়াই লাখ টাকা। তরুণীদের অনৈতিক ব্যবহার, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির-বাণিজ্য, জায়গাজমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হন পাপিয়া ও সুমন দম্পতি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অনৈতিক ও অপরাধকর্মের মাধ্যমে পাপিয়া যেভাবে টাকা কামিয়েছিলেন, তাতে তার মনে হয়েছিল, কেউ তার কিছু করতে পারবে না। পেছন ফিরে তাকানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। বার্ষিক কর দিতে হবে ভেবে ব্যাংকেও খুব বেশি টাকা রাখতেন না। হোটেল ওয়েস্টিনে তার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসা অনেকের সঙ্গেই পাপিয়া ছবি তুলেছেন। তাছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাপিয়ার অপরাধ কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে কারা, আসল সত্য কী, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।