ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ফলাফল ঘোষণা শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। বুথফেরত জরিপে এগিয়ে আছেন নির্দলীয় মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন। এরপরেই রয়েছেন উগ্র-ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এনএফ) পার্টির মেরিন লে পেন। তবে ডানপন্থী রিপাবলিকান পার্টির নেতা ফ্রাঁসোয়া ফিলন এবং ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থিত কট্টর বামপন্থী জ্যঁ-লুক মেলেঁকনও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। সব মিলিয়ে এটা নিশ্চিত যে, কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না।
আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রথম রাউন্ডে শীর্ষ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী। তাদের মধ্যে যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তিনিই হবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর আগে ক্ষমতার পরিবর্তন বামপন্থী এবং ডানপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে সীমিত থাকলেও এবার তাতে ছেদ পড়তে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার ডান বা বাম যে কোনও কট্টরপন্থার উত্থান ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফ্রান্সের নির্বাচনি ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে যদি কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট অর্জন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে শীর্ষ দুই প্রার্থী অংশ নেবেন। তবে এবারের নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। সাবেক ব্যাংকার ম্যাক্রন গত বছর আগস্টে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজেই পৃথকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনের আগে লেস ইকোস ও রেডিও ক্লাসিকের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ২৩ শতাংশের সমর্থন নিয়ে তিনিই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তার সঙ্গে লে পেনের ভোটের পার্থক্য মাত্র ১ পয়েন্ট। ফিলনের ২০ শতাংশের সমর্থন এবং মেলেঁকনের রয়েছে ১৯ শতাংশের সমর্থন। অন্য সাত প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন সোশ্যালিস্ট পার্টির বেনয় হ্যামন, দুই ট্রটস্কিবাদী, তিন উগ্র-জাতীয়তাবাদী এবং এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তারা জনমত জরিপে অনেক পিছিয়ে আছেন। শীর্ষ চার প্রার্থীর মধ্যে ম্যাক্রন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষাবলম্বী। তিনি নিজেকে ‘ডান’ বা ‘বাম’ বলতে অস্বীকার করেছেন। তবে রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সায়েন্সেস পো-এর প্রেসিডেন্ট প্যাসক্যাল পেরিনিউ সোশ্যালিস্ট পার্টির সাবেক নেতা ম্যাক্রন সম্পর্কে বলেছেন, “সোশ্যালিস্ট পার্টির এখন কোনও অবকাঠামো নেই। নেই কোনও লক্ষ্য বা সম্মান। আর তা এখন পুনর্গঠনেরও সুযোগ নেই। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সোশ্যালিস্ট পার্টিই বামপন্থীদের সমর্থন পেয়ে এসেছে। তবে এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, দলে এক নতুন বাহিনী গড়ে উঠেছে। এর মূলে রয়েছেন ম্যাক্রন। তিনি একজন রাজনৈতিক এলিয়েন। এখানে কোনও ‘ডান’ বা ‘বাম’ নেই।” নির্বাচনি জনমতে এর আগে ফিলন এগিয়ে ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ম্যাক্রনের মতো ফিলনও ইইউপন্থী। তবে সম্প্রতি জনমত জরিপে তার অবস্থান নিচে নেমেছে। এ কারণে পরাজয় মেনে নিয়েছেন ফিলন। তিনি ম্যাক্রনকে সমর্থন করেছেন এবং তাকে ভোট দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
যদিও জনমত জরিপে প্রার্থীদের ব্যবধান খুবই কম থাকায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যে কোনও ফলাফলই সামনে আসতে পারে।
কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থিত মেলেঁকন রাজনৈতিক পার্টি বা কাঠামোর বাইরে থেকেই নির্বাচন করছেন। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি আয়ের মানুষদের ১০০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। ওয়েবসাইট, হলোগ্রাম, ইউটিউব ও ভিডিও গেমের মাধ্যমে তিনি তরুণ ভোটারদের সমর্থন নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।