জাতীয় সংবাদ: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১২ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩০ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা। নিজের বাসা থেকে এই অনলাইন বুলেটিন উপস্থাপনে যোগ হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১১২ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩০ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নতুন করে মারা গেছেন আরও একজন। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭০ জন ও নারী ৪২ জন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঢাকায় ৬২ জন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নারায়ণগঞ্জে ১৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ বছরের নিচে ৩ জন, ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৩ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ১১ জন। নতুন করে যিনি মারা গেছেন তিনি ষাটোর্ধ্ব পুরুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে আরও ১ হাজার ৩৩৭ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ১৪৯ জনকে। এ সময়ে ৮৫৬ জনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৭ জনকে। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৩ জন। এখন আইসোলেশনে রয়েছেন ১৩৫ জন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রাজধানীসহ সারাদেশে আইসোলেশন বেড সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) ২ হাজার বেড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটে ১ হাজার ৪০০ বেড ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে চারটি ভবনে ১ হাজার ২০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিটসহ মোট ৫ হাজার ৬০০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট যুক্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এতে যুক্ত হন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, সারাদেশের ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টাই সব ধরনের রোগীকে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এসব হাসপাতালের কয়েকটি করোনা রোগীদের সেবা দিতে নিবেদিত থাকবে। সব ধরনের রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বেসরকারি ২০ হাজার ডাক্তার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকতে হবে। ঘরে থাকলে নিজে ও পরিবারের সদস্যসহ সবাই ভাল থাকবেন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও তারা গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার কথা বলেছেন তারা।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় সোয়া ১৫ লাখ। মারা গেছেন সাড়ে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ। তবে তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও গত ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সবশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩০। মারা গেছেন ২১ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৩ জন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।