জি.এম আবুল হোসাইন : মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঝুঁকি হ্রাসে দেশব্যাপী জনসমাগম সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে জনসাধারণকে প্রশাসনের পক্ষ হতে উদ্বু্দ্ধ করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশাসনিক কড়াকড়ি চলমান থাকলেও সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, পাথরঘাটা, গোবিন্দকাটি, বিহারিনগর, মাধবকাটি, ছয়ঘরিয়া, বলাডাঙ্গা সহ বেশ কিছু এলাকায় সরকারি নির্দেশনা ও সামাজিক দুরত্ব অনেকটাই মানছেনা সাধারণ মানুষ। এছাড়া ঢাকা, মিরপুর, নারায়নগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘরে ফেরা শ্রমজীবি মানুষেরা সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়তই। শ্রমজীবি মানুষেরা কেউ ইটের ভাঁটা, কেউ ওয়ার্কশপ, কলকারখানা কেউ বা গার্মেন্টস এ কাজ করতো। দেশ ও জাতি উন্নয়নে যেমন তাদের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি রয়েছে দেশের সংকটময় সময়েও সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার দায়িত্ব। কিন্তুু ঘরে ফেরা এসব মানুষেরা মানছে না সরকারি নির্দেশনা। প্রাতিষ্ঠানিক কোরেন্টাইনের স্বল্পতা থাকায় হোম কোরেন্টাইনে ১৪ দিন থাকা তো দূরের কথা, প্রতিনিয়তই তারা স্থানীয়দের মত হাটে বাজারে, চায়ের দোকানে, পথে ঘাটে গল্প গুজব ও পান -সিগারেট মুখে নিয়ে অলস সময় পার করছে। প্রশাসনের ভয়ে মাঝে মাঝে জনসমাগম এড়িয়ে চললেও অধিকাংশ সময় মানছে না সামাজিক দুরত্ব। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে গ্রামের রাস্তায় বাড়ছে অবাধ বিচরণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা, ছয়ঘরিয়া ও মাধবকাটি এলাকায় সন্ধ্যার পরে বাড়ছে মাদকসেবীদের উৎপাত। গ্রামের রাস্তায় নেশার তাগিদে মোটরসাইকেল চড়ে অনেকেই মহড়ায় ব্যস্ত। মোড়ে মোড়ে নতুন তৈরি হওয়া দোকান গুলোতেও বাড়ছে জনসমাগম। চা সিগারেট আর মাদকের আড্ডা। মহামারী করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ার পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ালেও, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ অজ্ঞ ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষরা যেন করোনা ভাইরাসকে তোয়াক্কাই করছেনা। সরকারি নির্দেশনা সহ সামাজিক দুরত্বও ঠিকমতো মানছেনা লোকজন। এলাকার কিছু কিছু মসজিদে নামাযের জামায়াতে ২০-৩০ জনের বেশি অংশ নিচ্ছে একসাথে। এমনকি মাস্ক না পরে একগুয়েমি ভাবে বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে। কেবলমাত্র দুপুর দুটোর পর থেকে বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রাখা হলেও, গত কয়েকদিনে অভ্যন্তরীন এলাকার দোকানপাট খোলা রাখার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে অপ্রয়োজনে ঘুরতে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা আবারো বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মালেক বলেন, অনেকেই অকারণে গ্রামের রাস্তায় ও বাজারে ঘোরাঘুরি করছে। বিভিন্ন মোড়ে বসে চা, সিগারেট খাচ্ছে। কেউ কেউ নেশা করছে বলেও শুনেছি। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রচারণা অব্যাহত রাখলেও মানছে না সাধারণ জনগন। এসব বন্ধ না হলে ক্ষতি হবে আমাদেরই। তাই মাননীয় জেলা প্রশাসককে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ হতে বলতে চাই অনতিবিলম্বে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন সহ সদর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হোক। তবেই “সবাই ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান” স্লোগানটি স্বার্থক হবে। বাংলাদেশ বেতারের নাট্যকার ও কবি ডা. মো. সামছুজ্জামান ডেইলি সাতক্ষীরা’কে বলেন, অবাধে মানুষ চলাফেরা করার কারণে সামাজিক সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই দ্রুত সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বিশ্বের দু’ শতাধিক দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ সরকারের বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউন , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা, সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ সহ মানুষকে হোম কোয়ারাইন্টানে থাকার নির্দেশনা, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্বে অবস্থান করা, ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া প্রভৃতি। কিন্তু আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছা মত করে অবাধে চলাফেরা করছে। এভাবে চলতে থাকলে বেশিদিন সাতক্ষীরা’কে করোনা মুক্ত রাখা সম্ভব হবে না। ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শরিফুজ্জামান ময়না বলেন, আমার ওয়ার্ডে ঢাকা ফেরত ৪জনকে হোম কোরেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর পরেও বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর টহল, পুলিশ চেকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও কোনভাবেই পুরোপুরি ঘরে রাখা যাচ্ছেনা এলাকার মানুষদের। এব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের আরো বেশি ভূমিকা নিতে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজমল উদ্দীন নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিদিনই জেলাব্যাপী জনসমাগম ও বাইরের জেলা থেকে আসা ইটভাটা শ্রমিকদের অনুপ্রবেশের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিও দিনদিন তীব্র হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই করোনা সংক্রমন সাতক্ষীরাতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই মানুষকে ঘরে রাখতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট, সেনাবাহিনীর টহল জোরদার ও পুলিশের কঠোর অবস্থানকে আরো কঠোরভাবে প্রয়োগ করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।