নিজস্ব প্রতিনিধি : সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কর্মস্থলে (স্টেশন) অনুপস্থিত রয়েছে সাতক্ষীরার অনেক সরকারি কর্মকর্তা। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে দিশেহারা মানুষ। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বেড়েই চলেছে। যে কারণে অনেক জেলা লকডাউন করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতেও অঘোষিত লকডাউন চলছে। এপরিস্থিতিতে দেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব-স্ব কর্মস্থল (স্টেশন) ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ অমান্য করে সাতক্ষীরার বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের প্রধানরা কর্মস্থলে না থেকে বাড়িতে অবস্থান করছেন। কেউ বলছেন, স্ত্রী অসুস্থ্য আর কেউ দাবি করেছেন বাড়ি গিয়ে লকডাউনের কবলে পড়ে কর্মস্থলে আসতে পারছেন না। অথচ নির্দেশনা ছিলো স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকার। জানা গেছে, ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং ভোমরা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার চক্রবর্তী এবং সাতক্ষীরা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক বশীর আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে স্ব-স্ব কার্যালয় অনুপস্থিত। এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে আরো অনেকই কর্মস্থলে নেই। ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম এর গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলায় হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ভোমরা স্থলবন্দর অফিসে অনুপস্থিত থেকে বরিশাল জেলায় অবস্থান করছেন । এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগ নিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার চক্রবর্তী এর বাড়ি যশোর জেলায় হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ভোমরা স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগ নিরোধ কেন্দ্রে অনুপস্থিত থেকে যশোর জেলায় অবস্থান করছেন এবং সাতক্ষীরা জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক বশীর আহমেদ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে নিজ গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে অবস্থান করছেন। এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। শনিবার তিনি সাতক্ষীরায় আসছেন। শনিবার দুপুরে তিনি ভোমরাস্থল বন্দর পরিদর্শনে যাবেন। অথচ সেই বন্দরের কর্মকর্তা বর্তমানে বরিশালে অবস্থান করছেন। যদিও সচিব আসার খবরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আসা যাওয়ায় সংক্রমনের ঝুঁকি থাকলেও বন্দরের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভোমরাস্থল বন্দরের একটি সূত্র।
অন্যদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ২২ মার্চ রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত নেই বলে সংশ্লিষ্টরা খবর পান। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদের নাম পাঠানোর জন্য ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়। বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে ৯ এপ্রিল পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘উপজেলা পর্যায়ের ট্যাগ অফিসারদের ইউনিয়নভিত্তিক সংযুক্ত করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। যারা কর্মস্থলে উপস্থিত নেই তাদের তালিকা পাঠাতে হবে। একইভাবে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপজেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে সামগ্রিক বিষয়টি সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের কাজ করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত নেই তাদের নামের তালিকা পাঠাতে হবে।
এবিষয়ে ভোমরা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ্য থাকায় গত বুধবার বাড়ি এসেছি। আবার ৩ এপ্রিল যাবো। আমার বাড়ি আসার বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক বশীর আহমেদ বলেন, একটা সমস্যা কারণে বাড়ি এসে আটকে গেছি। বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা লকডাউন এছাড়া সাতক্ষীরাতেও অঘোষিত লকডাউন চলছে। তারপরও আগামী সপ্তাহে কর্মস্থলে পৌছানোর চেষ্টা করবো। ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলামের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ না করায় তা সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ে করোনা(কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ নিরোধ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, উনারা এতগুরুত্বপূর্ণ না। কর্মস্থলে না থাকলেও সমস্যা নেই। তারপরও এবিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।