মতামত

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

By daily satkhira

May 07, 2020

বরাবর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

বিষয়ঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে’ বিবাদমান নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আবেদন।

প্রিয় মানবতার মা, পত্রের শুরুতে গ্রহণ করবেন হৃদয় নিংড়ানো উষ্ণ অভিনন্দন। আশা করি, বাঙ্গালি জাতির জনকের কন্যা আল্লাহর অশেষ কৃপায় ভালো আছেন। আজকে যখন এই পত্রখানা লেখা শুরু করি তখন সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি আমার আপনার তথা আমাদের সকলের মাতৃভূমি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা আমাদেরই বাংলাদেশ কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসের ছোবলে বিধ্বস্ত। আমাদের সকলের দু’নয়ন অশ্রুসিক্ত হৃদয় ভারাক্রান্ত আর চিন্তা ও চেতনায় এক ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কায় উৎকন্ঠিত। কি সেই বিপদ! সেই বিপদ হচ্ছে খাদ্যের অভাব বা দুর্ভিক্ষ। এই করোনা ভাইরাসের কারণে সকলে আজ গৃহবন্দী। তার কারণ আজ মানুষ গৃহবন্দী জীবনে উপলব্ধি করছে প্রতিটি বাড়িতে গোলায় ধান থাকা দরকার, পুকুরে মাছ থাকা দরকার, গোয়ালের গরু থাকা দরকার, বাড়িতে হাঁস মুরগি থাকা দরকার, ক্ষেতে শাকসবজি ফল ফলাদি থাকা দরকার। তাহলেই কেবল পৃথিবীতে টিকে থাকা সম্ভব মানবজাতির।

তাই মমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি ও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ও জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অবগত আছেন যে, দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত জরাজীর্ণ বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাপনাকে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে পরিচালনা করেন এবং দেশকে দ্রুত সময়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,মমতাময়ী মা আপনার সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরিচালনায় দেশ আজ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসাবে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিক-নির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সবোর্চ্চ বিবেচনায় নিয়ে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আপনি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। দারিদ্র্য, ঘনবসতি, নগরজীবনের নানা অনিশ্চয়তা আর জলবায়ুর পরিবর্তনের ভেতর বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও টিকে থাকার মূল জায়গাটি হচ্ছে ভূমি ও কৃষক সম্প্রদায়। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাছে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৮ সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন (৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন) এর লক্ষ্যমাত্রা (৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন) ছাড়িয়ে গেছে। দেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত; ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ মে.টন। নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম। এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে।

আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফুল রপ্তানি সম্প্রসারণের নিমিত্ত উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নসহ কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। যশোরের গদখালির পলিহাউসে রপ্তানিযোগ্য ফুল এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ দেশি-বিদেশি মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত আছে। এছাড়াও কাজু বাদাম, কফি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল চাষ ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সারের মূল্য ৪ দফা কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় নির্ধারণ করেছিলো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে; কৃষকদের জন্য এটা ছিল গত বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার দেওয়া সেরা উপহার কৃষকের জন্য।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দেশের হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কৃষকের জন্য ৭০শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ শতাংশ হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভর্তুকি প্রদান করেছেন। জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা ২০১৯ চূড়ান্ত করেছেন বলে শুনেছি, যাতে বিনা সুদে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকবে।

বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে,এখন কৃষি বহুমুখীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে আপনার। বাংলাদেশের কৃষক প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করে যেমন দেশবাসীর খাদ্য চাহিদা পূরণ করছেন, তেমনি ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি নানা মুল্যবান অপ্রচলিত ফসল উৎপাদনে সফলতা দেখানো হচ্ছে আপনার গৃহিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কারণে। দেশের কৃষক দারিদ্রমুক্ত হওয়া মানেই, দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। কৃষিক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের সাফল্য তাই দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটায়। নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, এসডিজি-২০৩০, রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি,৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট, ডেল্টাপ্লান: ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ পাবে।

আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার এই কৃষি সংক্রান্ত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ও কৃষি সংক্রান্ত ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ও করোনা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য মাঠ পর্যায়ে বিশাল সংখ্যক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে সৈনিক রূপে প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। আর ভবিষ্যতেও তারাই ভূমিকা পালন করবে আর আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করবে। আর এই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগে বর্তমানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে যা আপনার ও আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন কে ভূলুণ্ঠিত করার ষড়যন্ত্র মনে করি আমি, তাই আপনার অবগতির জন্য নিম্নে তুলে ধরলাম।

আমি জানি না এই চিঠিখানা আপনার নজরে আসবে কি না, যদি আসে তাহলে আপনার মহামুল্যবান সময় থেকে একটু সময় ব্যয় করে চিঠিখানায় সু-নজর দিবেন। মানবতার মা আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে ২০১৮ সালে ১২০১০০০০৩৮১১০০৪২০১৭৮২৬ নম্বর স্মারক এর ১৬৫০ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।এতে মোট ৫০ জেলার কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিল। অন্য জেলাগুলোর জেলা কোটা খালি না থাকায় আবেদন করতে পারেনি। কিন্তু এসব জেলা থেকে মামলা করা হয়েছিল তাদের আবেদন করার সুযোগ পাওয়ার জন্য।কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পদটি ছিলো ১১তম গ্রেডের এবং সকল প্রকার কোঠা ও সরকারি সকল বিধি-বিধান মানা হবে এই মর্মে উল্লেখ ছিলো। গত ০২-০৮-২০১৯ ইং তারিখ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। যেখানে ২৮০০০+ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে মোট ১০০৩৯ জন প্রার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তারপর ১৩-০৯-২০১৯ ইং তারিখ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাতে মোট ৫১১৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। ১৮-১২-২০১৯ তারিখ থেকে ১৪-০১-২০২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৮ দিন ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভা পরীক্ষার ২ দিন পর ১৭-০১-২০২০ তারিখ শুক্রবার বেলা ২ ঘটিকায় সরকারি ছুটির দিন প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১৬৫০ টি রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ চার বছর (২০১৬-২০২০) পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে ফল প্রকাশ করে তা অত্যান্ত হতাশাজনক। কারণ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকাশিত ফলে দেখা যায় যে, এই নিয়োগে সবচেয়ে কোনো অবস্থাতেই জেলা কোঠা মানা হয় নি এবং তথাকথিত কিছু জেলা থেকে অধিক পরিমাণে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যদি জেলা কোঠা না মানবে তাহলে বাকি ১১ জেলা কি অপরাধ করেছে। আর আমাদের জেলাসমূহে থেকে প্রতিবন্ধী, এতিম, আনসার, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে থেকে কিছু নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু জেলার সাধারণ মেধাবী নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। তার মানে এই দাঁড়ায় যে আমাদের জেলাসমূহে সাধারণ মেধাবী নেই ওই বিশেষ জেলাসমূহে শুধু মেধাবীরা রয়েছে। এই নিয়োগে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় নিয়োগের প্রকাশিত ফলে নিয়োগের পূর্ববর্তী সার্কুলার এর তারিখ ও স্মারক নম্বর এর সাথে কোন মিল নেই। পরে ১৮ তারিখ তা কোনো প্রকার সংশোধনী না দিয়ে গোপনে তা ঠিক করা হয় যা এক প্রকার দুর্নীতি কর্মকান্ড। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশের নিয়োগ বঞ্চিতরা গত ২৩ -০১-২০২০ ইং তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করি এবং ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করি। যাহার নং-১৭৩৫। উক্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া এক মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে কিছু রুল জারি করেন। অদ্যাবধি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উক্ত রুল সমূহের জবাব দেননি। বিধায় পর্যায়ক্রমে স্থগিত আদেশ বৃদ্ধি পেয়ে অদ্যবধি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও উক্ত রিটের উপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আপিল বিভাগে আপিল করেন। উক্ত আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ ২০২০ইং তারিখে মহামান্য প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের ১ নং বেঞ্চের বিচারপতিদের সমন্বিত বেঞ্চ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আপিল খারিজ করে দেন এবং হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে দ্রুত হাইকোর্টের রুল সমূহের জবাব দিতে এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি স্থবিরতা চলে এসেছে যার ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিপুল পরিমাণ শূন্য পদ পুরণ না করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ কৃষককে কৃষি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ঘোষণা করেছেন যে, দেশের অনাবাদি সকল জমি কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার মধ্যমেই দেশের সংকটময় মুহূর্তকে জয় করতে হবে যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সাহায্য করবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী আকারে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে যার ফলে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সমূহে সাধরণ ছুটি ঘোষণা করেন। এই সাধারণ ছুটিতে যেন কৃষি উৎপাদন সেবা বিঘ্নিত না হয় সেজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীগন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দেওয়া করোনা পরিস্থিতির বিভিন্ন দফার মধ্যে ১৫ নং দফা হচ্ছে “খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে।” এবং ২৭ নং দফা হচ্ছে- ‘কৃষকেরা নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মমতাময়ী মা, দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে এবং দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি তথা কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার করার লক্ষ্যে মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের উপস্থিতি ও কৃষকদের সঠিক পরামর্শ প্রদান করা এবং কৃষকদের নানামুখী সমস্যা সমাধান করা খুবই জরুরি | যাহা সবসময়ই কৃষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কাজ করে আসছেন। যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে সারাদেশে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদের সংখ্যা ১৪৩৯৩ টি। এরমধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১০০০ থেকে ১৫০০ টি পোস্ট খালি হয়ে যায় চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার কারনে। যাহা প্রতিবছর নিয়োগের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করা হয়। কিন্তু গত চার বছরে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় বর্তমানে আনুমানিক ৩০০০ থেকে ৪০০০ টি পদ শূন্য রয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক পদ খালি রেখে কিভাবে আপনার কৃষি বিষয়ক লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব!

অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মমতাময়ী মা, আপনার নিকট আর্জি এই যে, উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনা করে দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তকে কাটিয়ে তুলতে ও দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার স্বার্থে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনগত ঝামেলা মিটিয়ে অর্থাৎ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের প্রতি যে অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে তাদের দ্বারাই জেলা কোটা পূরণ করার মাধ্যমে আমাদেরকে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করে আমাদেরকে দেশের এই খাদ্য ও কৃষি যুদ্ধে অগ্রগামী সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানে আপনার সু-মর্জি কামনা করছি।

রিটকারীদের পক্ষে মো. আরিফ হোসেন, আনন্দ কুমার চন্দ ও তানভীর আহমেদ।