দেশের খবর: কক্সবাজারে আজ শনিবার আরো একজন রোহিঙ্গাকে করোনা পজিটিভ হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল ৪ জনে। এদিকে উখিয়ার কুতুপালং ও লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আরো এক হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বস্তি শনিবার লকডাউন করা হয়েছে। উক্ত সংখ্যক পরিবারে কমপক্ষে ৫ হাজার রোহিঙ্গার বসতি রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার লম্বাশিয়া শিবিরটির আরো এক হাজার ২৭৫ পরিবারের ৫ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বসবাসের এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত ৩ জন রোহিঙ্গার জন্য ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গার বসতি লকডাউন করা হলো।
রোহিঙ্গা শিবিরের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভুঁইয়া বলেন, আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের যথারীতি শিবিরের আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। ভাইরাস যাতে ব্যাপকভাবে ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের কঠোর লকডাউনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, শিবিরগুলোতে ১২টি আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এসব সেন্টারে এক হাজার ৩০০ সিট থাকবে। এ মাসের মধ্যেই কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ কাজও শেষ হবে। যদি এক হাজার ৩০০ সিটেও কুলাতে কাজ না হয় তাহলে দুই হাজার সিটে বৃদ্ধি করারও সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এলাকার লোকজন বলছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানীয়রা প্রবেশ না করলেও রোহিঙ্গারা যত্রতত্র শিবির থেকে বাইরে আসা-যাওয়া করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা এদেশের কোন আইন-কানুন এমনকি লকডাউনও মানে না। স্থানীয় হাটবাজার-স্টেশন, দোকান পাট সবখানেই এখন রোহিঙ্গাদের বিচরণ। এমনকি স্থানীয়দের যানবাহন থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য সবকিছুতেই ভাগ বসিয়েছে রোহিঙ্গারা। এসব কারণে ভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্ক সর্বত্র এখন।
এলাকাবাসী আরো জানান, মূলত ৮ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার জেলার সাথে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরও লকডাউন ঘোষণা করা হলেও শত শত এনজিও কর্মীর অবাধে রোহিঙ্গা শিবিরে যাতায়াত রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের নানা প্রান্তের কয়েক হাজার এনজিও কর্মী কর্মরত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। সারা দেশ লকডাউনের আওতায় আসার পরেও দেশের নানা প্রান্তের এনজিও কর্মীরা প্রতিদিনই আসা যাওয়া করছে রোহিঙ্গা শিবিরে। এনজিও কর্মীদের ফ্রিস্টাইল যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের জন্য শত চেষ্টা করেও স্থানীয় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে এনজিওদের নিয়ন্ত্রণ করতে।
ইউএনও জানান, রাতের বেলায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে এনজিও কর্মীরা দলে দলে উখিয়ার বাসা-বাড়ি এবং এনজিও অফিসে এসে আশ্রয় নেয়। এলাকাবাসীর মোবাইল পাবার পর পুলিশ নিয়ে রাতবিরাতে বের হয়ে তাদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হয়।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি হারুন সিকদার জানান, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো মুখে মুখে লকডাউন থাকার কথা যতই বলা হোক না কেন বাস্তবে রোহিঙ্গারা লকডাউন মানে না। তারা এসব বুঝেও না তেমনি মানেও না।’ তিনি বলেন, কোনো রোহিঙ্গা মাস্কও ব্যবহার করে না।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন খোকন জানান, রোহিঙ্গাদের মানবতা দেখিয়ে আমরা উখিয়া-টেকনাফবাসী জায়গা দিয়েছি। সেই রোহিঙ্গাদের কারণেই এখন আমরা এলাকাবাসাী করোনার ঝুঁকিতে পড়ে গেলাম।’ তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখ রোহিঙ্গা গিজ গিজ করছে। করোনা ব্যাপকভাবে ছড়ালে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো নয় সমানে উখিয়া-টেকনাফবাসীও কাতারে কাতারে মরবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার কক্সবাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে একজন রোহিঙ্গাসহ মোট ২৪ জন করোনা পজিটিভ হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আজ পর্যন্ত ৪ জন রোহিঙ্গা সহ কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় ১৭৭ জনকে করোনা পজিটিভ হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ৫২ জন করোনা আক্রান্ত রয়েছেন।