আজকের সেরা

এবার গণপিটুনির পর নারীসহ উদ্ধার রুমন, সাংসদ মা বললেন, “রুমন সেখানে যায়নি, বাড়িতে আছে”

By Daily Satkhira

September 12, 2016

নিজস্ব প্রতিনিধি: এবারও ঘটনার নায়ক মহিলা এমপি তনয় রাশেদ সরোয়ার রুমন। রোববার বিকেলে এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজনকে মারপিট করে সংবাদ শিরোনাম হন তিনি। একই দিন রাতে রুমন ভোমরায় নিজের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তাকে নিয়ে আবারও শুরু হয়ে যায় হই চই। আজ সোমবার দুপুরে খোঁজ মিললো সেই রুমনের। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি ফেলে রেখে তিনি রাতে এক নারীসহ শহরের মাগুরার বউ বাজারের ধারে বাঁশতলার সোনা চোরাচালানি মিলন পালের বাগান বাড়িতে আড্ডা দেন। বাড়িটিকে অনেকেই আধুনিক ‘রঙ্গশালা’ বা নারী ও অবৈধ মদের জলসাঘর বলে থাকেন। রুমন ওই বাড়িতে আছেÑ সকালে এ খবর জানাজানি হতেই গ্রামবাসী বাড়ি ঘিরে গণপিটুনি দিয়েছে তাকে। লাবসা ইউপি সদস্য আবদুল হান্নান জানান, সকালে জানাজানি হয় যে রুমন এক নারীসহ তার এলাকার মিলন পালের বাগান বাড়িতে  অবস্থান নিয়েছেন। তার বন্ধু মিলন বর্তমানে সোনা চোরাচালান মামলায় জেলে আটক রয়েছেন। তিনি বলেন খবর পেয়ে সেখানে যেতেই দেখি কাটিয়া এলাকার বহু মানুষ। তারা রুমনকে খুঁজছেন। রুমন মারপিটের ভয়ে রুমের ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেন। তিনি আরও জানান খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশও সাধ্যমত চেষ্টা করে রুমনকে রুম থেকে  বের করার। কিন্তু ব্যর্থ হয়। আবদুল হান্নান আরও জানান, এর কিছু সময় পর জেলা যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান পৌছান সেখানে। সাথে ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এপিপি এড. তামিম আহমেদ সোহাগ ও যুবলীগ পৌর কমিটির আহবায়ক মনোয়ার হোসেন অনু। তারা তাকে রুম থেকে রুমনকে বের করতেই শুরু হয়ে যায় এলোপাতাড়ি গণপিটুনি। গ্রামবাসী রুমনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় রুমন মাটিতে পড়ে যান। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে আহত অবস্থায় মোটর সাইকেলে নিয়ে যান যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান। সাথে অজ্ঞাত সেই তরুণিকেও। গ্রামবাসী জানান, আবদুল মান্নান তাদেরকে চোখ রাঙিয়ে শাসিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা না বলতেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। তারা আরও জানায়, সাথের মেয়েটি কে এমন প্রশ্নের উত্তরে রুমন তাদেরেকে জানান,‍ ‌সে আমার রেজিস্ট্রি করা বউ’। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রুমনের উদ্ধারকারী জেলা যুবলীগ  সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন ‘তাকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। এখন সে কোথায় তা আমার জানা নেই। তবে মারপিট একটু আধটু হয়েছে বৈকি। তা এসব নিয়ে না লিখলে হয় না?’ এদিকে, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান ‘রোববার রাতে যুবলীগ নেতা জুলফিকার রহমান উজ্জ্বলকে  হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের ঘটনায় রুমনকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য এসআই রফিক ও এএসআই পাইক দেলোয়ারকে পাঠানো হয় মাগুরা বাঁশতলার সেই মিলন পালের বাগানবাড়িতে। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি’। জানতে চাইলে এড. তামিম আহমেদ সোহাগ বলেন ‘ওর মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে। আমি সকাল পর্যন্ত ওর সম্পর্কে জানতাম। পরে সম্ভবতঃ সে ঢাকার দিকে চলে গেছে’। একই বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের আহবায়ক মনোয়ার হোসেন অনু বলেন ‘আমরা তাকে উদ্ধার করেছি। এখন তিনি বাড়িতেই আছেন। মারপিটে রুমন অনেকটাই আহত’ বলে জানান তিনি। এদিকে  ‘রুমন এক নারীকে  নিয়ে তার বাড়িতে উঠেছে’ এ খবর পেয়ে মিলন পালের স্ত্রী শম্পা রানী পাল সোমবার সকালে এসে তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার হুকুম দেন। কিন্তু রুমন তা শোনেন নি। তিনি এসময় গ্রামের লোকজনকে বিষয়টি জানান। শম্পা অভিযোগ করে বলেন ‘আমার স্বামী মিলন পাল জেলে রয়েছেন। আমিও কিছুদিন বাবার  বাড়িতে থাকছি। এই সুযোগে রুমন আমার বাড়িতে এসে কমপক্ষে ১৩টি গরু বিক্রি করে দিয়েছে। যার দাম প্রায়  ১৩ লাখ টাকা’। এ ছাড়া আমার স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করার নামে নগদ ২০ লাখ টাকা নিয়েছে রুমন। আরও দশ লাখ টাকা না হলে মিলনের প্রাইভেট কারটি দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন রুমন’। শম্পা আরও জানান রুমনকে বের করে নিয়ে যাবার পর তিনি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এদিকে রাশেদ সরোয়ার রুমনের এসব ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে  তার মা সাতক্ষীরার সংরক্ষিত আসন ৩১২ এর সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিন বরাবরের মত বলেন ‘রুমন সেখানে যাবে কেনো। সেতো বাড়িতেই আছে। কারা তার সম্পর্কে এসব অপপ্রচার দেয় বলেন তো। সে তো উজ্জ্বলের সাথে মারামারিও করেনি। মারামারি করেছে যুবলীগের ‘মান্নান গ্রুপ’ আর ‘উজ্জ্বল গ্রুপ’। এ নিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে আবার মামলা কিসের। তাছাড়া কারও বাগানবাড়িতে যাবার কথাও সত্য নয়। এ গুলি অপপ্রচার মাত্র’।