অর্থনীতি ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক প্রায় সকল কার্যক্রম। বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তখন বিশ্বের ২৫ বিলিওনিয়ারের আরো ধনী হওয়ার খবর দিয়েছে ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিন। মহামারির এই দুঃসময়েও তাঁরা চুটিয়ে ব্যবসা ব্যবসা করেছেন। দুই মাস আগের তুলনায় এসব অতিকায় ধনকুবের আরো বেশি ধনী হয়েছেন। ‘ফোর্বস’-এর বিশ্বের সেরা ধনকুবেরদের তালিকায় থাকা ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জন গত দু’মাসে ২৫৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছেন।
গতকাল শনিবার ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাবলিক স্টকের সঙ্গে যাঁদের ভাগ্য জড়িত, তাঁদের মধ্যে একসঙ্গে এই ২৫ ধনকুবেরের সম্পদের মূল্য প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের কোটিপতিদের মোট সম্পদের প্রায় ১৬ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি পোয়াবারো ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গের। মহামারিকালে তিনি এই ২৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়সা কামিয়েছেন। ফেসবুকের শেয়ারের দাম গত দুই মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। গত শুক্রবার তা শীর্ষে পৌঁছায়। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ফেসবুক গত বুধবার ডিজিটাল শপ চালুর ঘোষণা দিলে বিনিয়োগকারীরা তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রকাশিত ‘ফোর্বস’-এর ২০২০ সালের সেরা ধনীর তালিকায় মার্ক জাকারবার্গের অবস্থান ছিল ৭ নম্বরে। এখন তাঁর সম্পদের মূল্য ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার। আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটকে পেছনে ফেলে ৩৬ বছর বয়সী জাকারবার্গ এখন বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। এ ছাড়া তিনি ইন্ডিটেক্সের প্রতিষ্ঠাতা আমানসিও ওরতেগা এবং ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের চেয়েও এগিয়ে আছেন।
মহামারিকালে অঙ্কের হিসাবে লাভবান দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। করোনাভাইরাসের কারণে খুচরা বিক্রেতাদের দোকান বন্ধ হওয়ার পর থেকে ই-কমার্স খাতে বাড়বাড়ন্ত। আর এই খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২৩ মার্চ থেকে আমাজনের স্টক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। শুক্রবার দিন শেষ হওয়ার পর ২৩ মার্চ থেকে বেজোসের সম্পদের মূল্য ছিল ১৪৬.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার।
এ তালিকায় আছেন চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেসের (আলিবাবার পরে) পিন্ডুডুওর প্রতিষ্ঠাতা কলিন ঝেং হুয়াং। পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে ভাগাভাগি করার তাঁর সামাজিক শপিং মডেলটি বেশ কাজে দিয়েছে। পিন্ডুডুওয়ের শেয়ারের দাম ২৩ মার্চ থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ৪০ বছর বয়সী হুয়াংয়ের ভাগ্যে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়েছে। তিনি এখন চীনের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি, যার সম্পদের মূল্য ৩৫.৬ বিলিয়ন ডলার।
এই মহামারিতে সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির। ফেসবুক মুম্বাইভিত্তিক রিলায়েন্স জিয়োর জন্য ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি গত এপ্রিলে এশিয়ার শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার প্রাইভেট ইক্যুইটি জায়ান্ট কেকেআর থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার এবং এই মাসের শুরুর দিকে বিনিয়োগ সংস্থা সিলভার লেকের কাছ থেকে ৭৫০ মিলিয়নসহ এই সংস্থাটি আরও বেশি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আম্বানির প্রতিষ্ঠান এক মাসেরও কম সময়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মূলধন অর্জন করেছে। মুকেশ আম্বানির সম্পদের মূল্য এখন ৫২.৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ‘ফোর্বস’ লিখেছে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ধনকুবেররা মহামারির মধ্যে লাভের পথ দেখিয়েছে। ২৩ মার্চ থেকে এই ২৫ ধনকুবেরের একজনেরও ভাগ্য খারাপ হয়নি। যেমন ওয়ালমার্টের উত্তরাধিকারী জিম, এলিস এবং রবার্ট ওয়ালটনের ভাগ্য ন্যূনতম শতাংশের ভিত্তিতে বৃদ্ধি পেয়েছ, যা প্রত্যেকের ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। প্রথম দফায় প্রণোদনার চেকটি আমেরিকান ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছানোর পর ওয়ালমার্টের শেয়ারগুলো এপ্রিলের মাঝামাঝি সর্বকালের শীর্ষে পৌঁছেছে এবং তারা তাদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির ত্রৈমাসিক রাজস্বের তথ্য জানিয়েছে, অনলাইনে বিক্রি ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। এই তিন ওয়ালমার্ট উত্তরাধিকারীর সম্পদের মূল্য প্রায় ১৬৫ বিলিয়ন ডলার।
গত দুই মাসে যে ২৫ ধনকুবের আরও ধনী হয়েছেন—
জেফ বেজোস (২৯.৯ বিলিয়ন বেড়ে ১৪৬.৯ বিলিয়ন), বিল গেটস (১১.৯ বিলিয়ন বেড়ে ১০৬.৫ বিলিয়ন), বারনার্ড আরনুল্ট (১২.৮ বিলিয়ন বেড়ে ৯৪.১ বিলিয়ন), মার্ক জাকারবার্গ (৩১.৪ বিলিয়ন বেড়ে ৮৬.৫ বিলিয়ন), ওয়ারেন বাফেট (৬ বিলিয়ন বেড়ে ৬৯.২ বিলিয়ন), ল্যারি এলিসন (১০.৪ বিলিয়ন বেড়ে ৬৬.৪ বিলিয়ন), স্টিভ বালমোর (১৪ বিলিয়ন বেড়ে ৬৫.৪ বিলিয়ন), ল্যারি পেজ (১৪.২ বিলিয়ন বেড়ে ৬৩.৬ বিলিয়ন), সার্গেই ব্রিন (১৩.৭ বিলিয়ন বেড়ে ৬১.৩ বিলিয়ন), আমানসিও ওরতেগা (৫.২ বিলিয়ন বেড়ে ৬০.৫০ বিলিয়ন), জিম ওয়ালটনের (৩.৬ বিলিয়ন বেড়ে ৫৫.২ বিলিয়ন), অ্যালিস ওয়ালটন(৩.৬ বিলিয়ন বেড়ে ৫৫ বিলিয়ন), রব ওয়ালটন (৩.৬ বিলিয়ন বেড়ে ৫৪.৮ বিলিয়ন), ফ্রান্সয়েস বিটেনকোর্ট মায়েরস (৬.৪ বিলিয়ন বেড়ে ৫৪.২ বিলিয়ন), মুকেশ আম্বানি (১৯.৯ বিলিয়ন বেড়ে ৫২.৭ বিলিয়ন), কার্লোস স্লিম হেলু (৪.২ বিলিয়ন বেড়ে ৫১.২ বিলিয়ন), ম্যাকেনজি বেজোস (১০.৪ বিলিয়ন বেড়ে ৪৭.৪ বিলিয়ন), মা হুয়াতাং (৬.৮ বিলিয়ন বেড়ে ৪৬.৪ বিলিয়ন), জ্যাক মা (৩ বিলিয়ন বেড়ে ৪১.৩ বিলিয়ন), ফিল নাইট (৯.৯ বিলিয়ন বেড়ে ৩৭.৭ বিলিয়ন), এলন মাস্ক (৯.৫ বিলিয়ন বেড়ে ৩৬.৭ বিলিয়ন), কলিন ঝেং হুয়াং (১৭.৯ বিলিয়ন বেড়ে ৩৫.৬ বিলিয়ন), ফ্রান্সয়েস পিনাল্ট (২.১ বিলিয়ন বেড়ে ৩১.৮ বিলিয়ন), শেলডন অ্যাডেলসন (১.৪ বিলিয়ন বেড়ে ৩০.৭ বিলিয়ন) এবং মাইকেল ডেল (৩.৫ বিলিয়ন বেড়ে ২৮.৩ বিলিয়ন)। সূত্র- ফোর্বস।