দেশের খবর: লিবিয়ায় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যদের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে আরো ১১ বাংলাদেশি মারাত্মক আহত হয়েছেন। সেই নরক থেকে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছেন একজন বাংলাদেশি। তিনি ত্রিপলীস্থ দূতাবাসকে দিয়েছেন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা। বেঁচে ফেরা এই বাংলাদেশিকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে এবং তার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়।
তিনি জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন তারা। সেই পথেই মানবপাচারকারীরা তাদের জিম্মি করে। ঘটনাস্থল ত্রিপলী শহর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে। মানবপাচারকারীরা মোট ৩৮ জনকে জড়ো করে। উদ্দেশ্য তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা। অপহৃতদের রাজধানী ত্রিপলীতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে দ্রুত মুক্তিপণ আদায়ের জন্যে মিজদাহ শহরে নিয়েই শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। এক পর্যায়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বন্দিরা রুখে দাঁড়ান। তারা এ ঘটনার মূল হোতা এক লিবায়ান ব্যক্তির ওপর চড়াও হন। ঘটনাক্রমে তার মৃত্যুও ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে নিহতের স্বজনদের কাছে। পরে তারাসহ পাচারকারী দলের অন্যরা জিন্মিদের ওপর হামলা চালায়। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হন।
ঘটনায় বয়ান শুনে দূতাবাস অনুসন্ধানে নামে। তারাও নিশ্চিত হন যে, লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী বাংলাদেশিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে এবং সেখানে প্রায় সবাই হতাহত হন। কেবল একজন প্রাণে বেঁচে গেছেন। তার সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। তিনি বর্তমানে একজন হৃদয়বান লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে আছেন। দূতাবাস ঢাকাকে জানায়, নিহত ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ মিজদাহ হাসপাতালে সংরক্ষিত রয়েছে। অবশিষ্ট ১১ বাংলাদেশিরা হাতে-পায়ে, বুকে-পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস স্থানীয়দের সূত্র থেকে যে বয়ান পেয়েছে তার সঙ্গে বেঁচে ফেরা বাংলাদেশির দেয়া ঘটনার বর্ণনা প্রায় অভিন্ন। ওই বাংলাদেশিসহ স্থানীয় সূত্রের বরাতে ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে ঢাকায় একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। ইমেইলযোগে পাঠানো সেই রিপোর্টেও বলা হয়, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে কমপক্ষে ২৬ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়ান মিলিশিয়া গুলি করে হত্যা করার তথ্য মিলেছে।