জাতীয়

পুরনো চেহারায় ঢাকা, বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

By Daily Satkhira

June 02, 2020

দেশের খবর: সেই পুরোনো চেহারায় ফিরেছে রাজধানী। জীবিকার তাগিদে পুরোদমে কর্মব্যস্ত হয়ে পরেছে রাজধানীবাসী। ফুটপাত থেকে অলিগলি ও কাঁচাবাজার সর্বস্তরেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত দেখা গেছে। এতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি। করোনার প্রাদুর্ভাবে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। সোমবারও ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গেছে রীতিমতো যানজট। নিত্যপণ্য ও কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। কোথাও সামাজিক দূরত্ব ও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আলামত দেখা যায়নি। গণপরিবহন চালু হওয়ায় বাস, টেম্পোতে গাদাগাদি করে মানুষকে চড়তে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি পালনে বাধ্য করতে সরকারি কর্মীদের তৎপরতাও খুব একটা দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সোমবার জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২২ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ৩৮১ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিনের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৪০ জন এবং নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয় দুই হাজার ৫৪৫ জন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমুখী। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করায় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দু’দিনই প্রায় আড়াই হাজার করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। মূলত সাধারণ ছুটি কার্যকর না হওয়া, পর্যায়ক্রমে ছুটির শর্ত শিথিল করা, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরা ও ঢাকা থেকে ফেরত যাওয়া, ঈদ উপলক্ষে শপিং মল, বিপণিবিতান খুলে দেয়া, সাধারণ ছুটি পালনে সরকারি সংস্থাগুলোর নমনীয়তার কারণেই এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। সাধারণ ছুটি তুলে দেয়ার পর করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে কী না এর ফলাফল পাওয়া যাবে আরও ১৪ থেকে ২১ দিন পর।

করোনা সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মানুষের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনা প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়, যা গত ৩০ মে শেষ হয়। ৩১ মে সরকারি ও বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল থেকে দেশব্যাপী গণপরিবহনও চালু হয়েছে। যদিও এর আগে সাধারণ ছুটির মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে, যা এখনও বাড়ছে।

এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকা ফেরতরা ঢাকায় আসার পর অনেক মানুষের একসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ মতিঝিলের মতো ডাউনটাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খুলে দিলেও রাস্তায় মানুষের জট হবে; সংক্রমণ ছড়াবে। আমরা রোগ সংক্রমণ কমানোর পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছি। করোনা সংক্রমণ চূড়া থেকে নামার দুই সপ্তাহ পরে বোঝা যাবে চূড়া থেকে নেমেছি কীনা।’

এদিকে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ঘাটের ১০ নম্বর পন্টুনে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। অথচ সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম লক্ষণ দেখা যায়নি। যাত্রীদের গাদাগাদি করে ঘাটে চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না, কেউ কেউ গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে চলাফেরা করেছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন অনেকেই মানছে না; লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানেও ছিল নানা রকম ছাড়। এই ছুটি পেয়ে ঢাকাবাসীর একটি বড় অংশই গ্রামমুখী হয়েছেন; অনেকেই এখন ফিরছেন। কেউ গ্রামে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কেউবা পুনরায় ঢাকায় ফিরে এসে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এসব কারণে ছুটি বাতিল অর্থাৎ সবকিছু খুলে দেয়ায় ব্যাপকভাবে করোনা ঝুঁকি বেড়েছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্কও ছড়াচ্ছে। তবে ছুটি তুলে দেয়ার পর করোনা সংক্রমণ কতুটুক গতিশীল হয়েছে তার ফল পেতে এখন অপেক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রথমদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে করোনা সংক্রমণ বেশি ছিল। পরবর্তীতে তা সারাদেশে ছড়িয়েছে। প্রথমদিকে ওই তিন জেলাকে ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) করা হলে করোনার প্রায় ৮০ শতাংশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সরকারি প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা না করে বার বার সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। তাছাড়া ওই সময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কম ছিল।