নিজস্ব প্রতিনিধি : নিঃসন্তান ফুফুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে পাঁচদিন আটক রেখে ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় পুলিশ একজন কে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার ভোরে তাকে সাতক্ষীরার কলরোয়া উপজেলার গয়ড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতের নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি কলারোয়া উপাজেলার বহড়া গ্রামের ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার বালিয়াডাঙা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী সোনাভান বিবি তার পৈতৃক জমি দক্ষিণ বহুড়া গ্রামে বসবাস করতেন। পৈতৃক ও কেনা জমি তার এক একর ১৫ শতক। নিঃসন্তান ফুফুর সম্পত্তি যাতে তার আপন ভাইপোরা না পায় সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ওই জমি লিখে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল সোনাভান বিবির চাচাতো ভাই ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে ইস্রাফিল, আজিজুল ও জাহাঙ্গীর হোসেন। গত ২৬ ফেব্র“য়ারী সকালে সোনাভান বিবির স্বামী ওয়াজেদ আলী খুলনায় চোখ অপারেশনে যায়। পরদিন সোনাভান বিবি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিকেলে কলারোয়া হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর নাম করে ইসমাইল বিশ্বাসের তিন ছেলে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার গোপন ডেরাসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় গত ২ মার্চ সকালে কলারোয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক পলাশের সেরেস্তায় নিয়ে যায়। ওই দিন তাকে পলাশের সেরেস্তা থেকে তুলে নিয়ে একটি ঘরে জোরপূর্বক বসিয়ে রাখা হয়। পরে অসুস্থ সোনাভানকে দু’ বাহু ধরে উপরে তুলে সাব রেজিষ্টারের সামনে নিয়ে মাথা কাত করিয়ে জমি দানপত্রের সম্মতি সম্পর্কে রাজী দেখানো হয়। সন্ধ্যায় তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন জাহাঙ্গীর, ইস্রাফিল ও আজিজুলের নামে তিনি ৩৯ কাঠা জমি পলাশ চৌধুরীর সেরেস্তার দলিল লেখক মারুফ হোসেনের লেখা মাধ্যমে দানপত্র করেছেন বলে পাড়ার লোকজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন। সোনাভান বিবি সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাফিল, আজিজুল, জাহাঙ্গীর, পলাশসহ তিন চারজন তাকে কয়েকটি কাগজে জোরপূর্বক সাক্ষর করতে বাধ্য করেন। রেজিষ্টারের কাছে যেয়ে দলিলে যা লেখা আছে তা পড়ে স্বাক্ষর করেছেন বলে বলার জন্য ধমক দেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় মাতব্বর, রাজনৈতিক নেতা ও আত্মীয়দের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে তিনি কলরোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শরনাপন্ন হয়। একজন অসহায় নারীর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আকুল আবেদন করেন তিনি।
কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক ইস্রাফিল হোসেন বলেন, সোনাভান বিবি’র অভিযোগটি শুক্রবার এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার পর শনিবার ভোরে জাহাঙ্গীর হোসেনকে ভোরে তার দ্বিতীয় বাড়ি গয়ড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ফুফুকে আটক রেখে জমি দানপত্র দলিল করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তাকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। কলারোয়া সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক পলাশ চৌধুরী বলেন, তার সেরেস্তায় অনেক দলিল হয় প্রতিদিন। রয়েছে কয়েকজন দলিল লেখকও। সেক্ষেত্রে তিনি অধিকাংশ দলিল রেজিষ্টারের কাছে উপস্থাপনের আগে স্বাক্ষরও করে থাকেন। তবে সোনাভান বিবি তাকে চেনেন না বা তিনিও তাকে চেনেন না। স্থানীয় রাজনীতির গ্র“পিং এর কারণে তার বিরুদ্ধে এস ধরণের অভিযোগ এনে তার চারিত্রিক সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজিজুল ইসলামের কাছে শুক্রবার বিকেলে তার ০১৭০৪-৬৬৬৮৪২ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রং নাম্বার বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনীর উল গিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, একজন অসহায় অশিক্ষিতা বৃদ্ধা নারীর প্রতারিত হওয়া সম্পত্তি ফিরে পেতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।