সাতক্ষীরা

প্রয়াত কমরেড কাবুল এক অনন্য ক্ষমতার অধিকারী– সাতক্ষীরায় স্মরণ সভায় বক্তারা

By daily satkhira

June 06, 2020

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় প্রয়াত কমরেড মোস্তাফিজুর রহমান কাবুলের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরেড এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি। সাধারণ সম্পাদক কমরেড এড. ফাহিমুল হক কিসলুর পরিচালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন উর রশিদ। বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড মহিবুল্লাহ মোড়ল, কমরেড সাবীর হোসেন, কমরেড আবেদুর রহমান, কমরেড ময়নুল হাসান, কমরেড স্বপন কুমার শীল প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কমিটির সদস্য কমরেড আব্দুর রউফ মাস্টার, কমরেড মফিজুল হক জাহাঙ্গীর, কমরেড নির্মল সরকারসহ জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ। শোকসভায় প্রথমে কমরেড কাবুলের প্রতিকৃতিতে জেলা পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় কৃষক সমিতি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, খেতমজুর ইউনিয়ন, যুব মৈত্রী, ছাত্রমৈত্রী নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কমরেড স্বপন কুমার শীল শোকসভায় প্রয়াত কমরেড কাবুলের কর্মময় জীবনী পাঠ করেন। রবীন্দ্র সংগীত “যখন পড়বে না কো পায়ের চিহ্ন এইবাটে” পরিবেশন করেন ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি। এসময় বক্তারা বলেন, তার প্রচুর পড়াশোনা ছিল। জানার ইচ্ছা ছিল। ভালো বক্তা ছিলো। ভালো লিখতে পারতেন। তাকে তিনবার প্রমোশন দেওয়া হলেও শ্রমজীবি মানুষের কাজের স্বার্থে, সংগঠনের স্বার্থে প্রমোশন গ্রহণ করেনি। তিনি নিষ্ঠার সাথে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিভক্তির রাজনীতি চাইতেন না। সব সময় ঐক্যের রাজনীতির কথা বলতেন। এমএম কলেজে পড়াকালীন তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কমরেড কাবুল রাজগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি, এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি, বিএ অনার্স (অর্থনীতি অনার্স ১ম শ্রেণি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স পাশ করেন। পরবর্তীতে এলএলবি পাশ করেন। ছাত্র অবস্থায় প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত। পরবর্তীতি শ্রমিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমিক রাজনীতির কারণে চাকুরী ক্ষেত্রে তিনি বেশ কয়েকটি প্রমোশন স্ব ইচ্ছায় নেননি। পার্টিতে তার নাম অসীম ও রাজ্জাক ছিলো। ১৯৮৩ খ্রিঃ ৯ ডিসেম্বর তিনি সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হন এ সময় তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান। পার্টির ক্লান্তিলগ্নে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। কর্মি বান্ধব ছিলেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পার্টির মুখপাত্র নতুন কথা সহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়। যশোরের প্রেসক্লাব, শ্রমিক ইউনিয়ন সহ একাধিক সংগঠনের নির্বাচনী পরিচালনার দায়িত্ব কমরেড কাবুলের উপর পড়তো। যশোরের সর্বমহলে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কপোতাক্ষ আন্দোলন তার গ্রাম থেকেই শুরু হয়। কমরেড কাবুল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক লিঃ এর সিনিয়র অফিসার ছিলেন। লেখক, কলামিষ্ট, পাঠাগার সংগঠক, সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী সম্পাদক হিসেবে ২০০৯-২০১২ এবং ২০১২-২০১৫ খ্রিঃ পর্যন্ত নির্বাচিত হন। তিনি বই সংগ্রহ, বিভিন্ন প্রকাশনা, প্রতিযোগিতার আয়োজন ও লাইব্রেরীর উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমি, নান্নু চৌধুরী ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট্র, সেখহাটি তরুণ সংঘের জীবন সদস্য, মৃত্তিকা লিটল ম্যাগাজিনের উপদেষ্টা, কপোতাক্ষ আন্দোলন সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন, বাম আন্দোলন, দুর্ভাগ্য ক্রমে অনেক বিভক্তি দেখেছে। তার কোনটাই শুভ হয়নি। কমরেড কাবুল ছিলেন যে কোন বিভক্তির ঘোর বিরোধী। তিনি মত পার্থক্য মেনে নিতেন, কিন্তু কোন বিভক্তি মেনে নিতে পারেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ছিল তার চিন্তা। আমরা কমিউনিস্টরা মত পার্থক্যের মধ্যে ঐক্য রাখতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ নাই। একজন মননশীল বিপ্লবীর হৃদয় নিংড়ানো কথা। কমরেড কাবুল এক অনন্য ক্ষমতার অধিকারী। তিনি অনেক বড় বড় নেতার সান্নিধ্যে এসে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ও নিজের চিন্তাকে স্বাধীনভাবে বিকশিত করতে পারতেন, অসাধারণ গুণ তিনি বুক চিতিয়ে নিজের মত করে ভাবতে পারতেন, বলতে পারতেন এবং লিখতে পারতেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এক অমিত সম্ভবনার নেতাকে হারালো। বৈচিত্রের মধ্যে সৌন্দর্য এটাই ছিল তার সাংস্কৃতিক মানস। কমরেড মোস্তাফিজুর রহমান কাবুল যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন অনাগত বিপ্লবীদের মাঝে। বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই, তার অকাল মৃত্যু শোকস্তব্ধ করুক, দুর্বল যেন না করে। এই শোক সভা থেকে কমরেড কাবুলকে বিনম্র শোদ্ধা ও লাল সালাম।