আশাশুনি

সাতক্ষীরার গৌরাঙ্গ যেভাবে ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গি তামিম হলো

By Daily Satkhira

April 30, 2017

হাসান হাদী : ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদে জড়িয়েছে এমন তরুণদের সংখ্যা বাড়ছেই। এসব তরুণ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও  নব্য জেএমবিতে জড়াচ্ছে। নিজেদের বাসাবাড়িতেই গড়ে তুলছে জঙ্গি আস্তানা। বোমা বানানোসহ নিচ্ছে সামরিক প্রশিক্ষণও। কেউ আবার পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে হিজরতে। এভাবে ধর্মান্তরিত হয়ে উগ্রবাদের জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত যারা ইসলাম সম্পর্কে কম জানে এবং গরিব তাদের টার্গেট করে জঙ্গি বানানোর প্রক্রিয়ার অংশ এটি। সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার খাড়িয়াটির উত্তরপাড়ার শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মন্ডল (৩২) ধর্মান্তরিত হয়ে নাম গ্রহণ করে তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমীর হামযা। তার বাবার নাম শ্রী চৈতন্য কুমার মন্ডল, মায়ের নাম রেনুকা রানী মন্ডল। ২০১১ সালে সে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে। পরে ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর সে তাবলীগ জামাতের অনুসারী ছিল। সেখানেই তানভীর কবির নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তার সঙ্গে সে বাসায় যায়। তানিভীর কবিরের বাবা হুমায়ুন কবির সরকার তামিম দ্বারীকে পালক সন্তান হিসাবে গ্রহণ করে। ২০০৫ সালে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখানে ৭/৮ মাস পড়াশোনা করার পর ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হয়। ২০০৭ সালে পড়াশোনা শেষ করে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে। একই জাহাজে একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্কর নামে এক তরুণ কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালে ‘বাংলার কাকলি’ জাহাজ নিয়ে সে পাকিস্তানে যায়। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সহিংসতা চলছিল। এই সহিংসতা নিয়ে আবু বক্কর ও তামিম দ্বারীর কথা হয়। এ সময় আবু বক্কর তাকে জিহাদের কথা বলে। তামিম দ্বারী তখন জিহাদের বিষয়ে আগ্রহী হয়। এরপর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে মিরপুরে জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে তামিম দ্বারীর সাক্ষাত করিয়ে দেয় আবু বক্কর। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী বাংলার দূত জাহাজে যায়। এসময় তামিম দ্বারী জাহাজটি ঘুরিয়ে দেখায় তামিম চৌধুরীকে। তখন তারা নৌ-পথে নাশকতার রশদ আনার পরিকল্পনা করে। নৌ-পথে কর্মরত তরুণদের আরও জঙ্গিবাদে জড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তামীম চৌধুরী অনেকের ভুয়া পাসপোর্ট করে। ২০১৫ সালেও রাজধানীর কয়েকটি স্থানে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে তামিম দ্বারীর বৈঠক হয়। ২০১৬ সালে সে বসুন্ধরা জাহাজ-৪ এ চাকরি নেয়। ওই বছরের মাঝামাঝি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সালে সে হিজরতে বের হয়। গত বৃহস্পতিবার সাভারের একটি বাস থেকে তাকেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। এর আগেই র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।

এদিকে, কোরআন ও হাদিসের ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে এসব তরুণকে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার মতো ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের জঙ্গিবাদে নেওয়া হচ্ছে। যারা মূলত কোরআন হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান কম রাখে তাদের টার্গেট করেই জঙ্গিবাদে জড়ানো হচ্ছে।’