ডেস্ক রিপোর্ট: আতঙ্কের আরেক নাম লাদেন। এ লাদেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান নয়। এ লাদেন হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের গোবরদাড়ী পূর্ব কাশেমপুর এলাকার মৃত মাজেদ মাষ্টারের ছেলে রাফিউজ্জামান ওরফে লাদেন বাবু। বর্তমানে তিনি ওলামা লীগের নেতা হয়েছেন। লাদেনের অত্যাচারে গোবরদাড়ী পূর্ব কাশিমপুর এলাকার স্থানীয়রা সবসময় আতঙ্কে থাকেন কারণ কখন লাদেন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদের জমিজমা অথবা ঘের দখল করবে। এসব আতঙ্ক নিয়েই বেঁচে আছেন ফিংড়ি ইউনিয়নের গোবরদাড়ী পূর্ব কাশিমপুর এলাকার জনগণ। তবে লাদেন কোন প্রভাবশালী লোকের পিছনে লাগে না। তিনি গ্রামের যত অসহায় পরিবার আছেন তাদেরকে নিঃস্ব করতে লাদেন বাহিনী সবসময় মরিয়া। লাদেনের আরো আছে সুদের কারবার। তবে তার কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হলে ফাঁকা স্ট্যাম্প, নইলে ফাঁকা চেক দিতে হয়। এরপর তিনি তার ইচ্ছা খুশিমতো টাকার অংক বসিয়ে ভিটেমাটি চাটি করে থাকেন। আর যদি টাকা না দেয়া হয় তাহলে তো তার জন্য রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী অথবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এমনই অভিযোগ করেছেন একই এলাকার মৃত মতিয়ার এর ছেলে বদিয়ার রহমান (৭৫)। ১৪ বছর আগে বদিউর রহমানের একটা পুকুর সহ এক বিঘা জমি দখল করে নেন লাদেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে তার আরেক ভাই খুন হয়। ভাইয়ের খুনের ঘটনাটি পুঁজি করে তিনি এলাকার নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে যখন সবাই পলাতক থাকে তিনি তখন একে একে তাদের জায়গা জমি দখল করতে থাকেন লাদেন। ওই এলাকার সোহেল উদ্দিন সরদারের স্ত্রীর ৮ শতক জমি দখল করে ওই লাদেন। সোহেল উদ্দিনের আপন ভাই মনির উদ্দিন সরদার এর স্ত্রী খোরজানের ২৫ জমিও দখল করে নেয় লাদেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা। এছাড়া ওই এলাকার মৃত মোঃ আলী সরদারের ছেলে নজরুল ইসলাম ৪০ এর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার চিকিৎসার জন্য লাদেনের কাছ থেকে থাকা দুইটা ফাঁকা চেকে ও দুইটা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা সুদে টাকা গ্রহণ করেন। নজরুল ইসলাম গোবরদাড়ী হাই স্কুলে দপ্তরি পদে চাকরি করেন। ৫০ হাজার টাকায় প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা সুদের চুক্তিতে এ টাকা গ্রহণ করে নজরুল ইসলাম। দুই বছরে নজরুল ইসলাম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সুদ প্রদান করলেও তারপরও আসল টাকার জন্য লাদেন ও তার বাহিনী রাতের আঁধারে নজরুলের বাড়িতে হানা দেয়। লাদেনের ভয়ে চাকরির মায়া ত্যাগ করে নজরুল ইসলাম বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তবে এ সকল বিষয়গুলো জেলা আওয়ামী লীগ নেতা একজন আইনজীবী সবকিছুই জানেন। বর্তমানে লাদেন নয় লক্ষ টাকার একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন নজরুল ইসলামের কাছে। একই এলাকার আব্দুল জলিল সরদারের ছেলে সহজ সরল নিরীহ ও অসহায় ব্যক্তি মিজানুর রহমান (৩৮) লাদেনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। গত এক বছর আগে গ্রহণ করলেও লাদেনকে তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেছে। তবে এখনো সেই ১০হাজার টাকার জন্য লাদেন ও তার বাহিনী তার হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। তাদের হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মিজানুরের পরিবার। একই এলাকার শওকত হোসেনের স্ত্রী রেহানা বেগম (৩০) এ প্রতিনিধিকে জানান, ৫০ শতক জমির মধ্যে ৮ শতক জমি লাদেনের পিতা মৃত মাজেদ মাস্টারের কাছে বিক্রি করেন ৮ শতক জমি বিক্রি। ৮ শতক জমি ক্রয় করে লাদেন বর্তমানে ৫০ শতক জমি দখল করে রেখেছে। তিনি সেখানকার গাছপালা কেটেও সয়লাব করছেন বলে অভিযোগ করেন। লাদেন কারো কথা তোয়াক্কা করেন না। কারণ তার আছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। এদিকে শহরের মুনজিতপুরেও লাদেন দখল করে রেখেছে। সেই জমি নিয়ে লাদেন জেলও খেটেছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে তাহলে রাতের আঁধারে তার বাহিনী চলে যায় সেখানে। এরপর চলে হুমকি-ধামকি যদি কথা শোনা না হয় তাহলে চলে লাদেন বাহিনীর নির্যাতন। ফলে ওই এলাকার কেউ লাদেন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লাদেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন। তবে লাদেনের নামে রয়েছে কয়েকটি মামলা। এ ব্যাপারে ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে সোমবার রাত ৯টায় কয়েবার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের সরদার এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় কয়েবার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।