বিশেষ ডেস্ক : সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের এমপি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমলাদের হাতে। আমলারা শুরু থেকেই একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাদের এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এবং আমাদের সামনে এক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।’ বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় আ ফ ম রুহুল হক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যখন চীনে করোনা শুরু হলো তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রশাসনের ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ডিনায়েল ভাব ছিল। তারা বলছিলো কিছুই হবে না, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ হবে না। সেই সময় থেকেই প্রস্তুতির অভাব ছিলো।’ এই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সে সময় আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। দেখেছি তাদের মধ্যে উদাসীনতা ছিলো। তারপর যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হলো তখনই আমি সতর্ক করেছিলাম, এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে হাসপাতালে বেড লাগবে, চিকিৎসক লাগবে, অক্সিজেন লাগবে এবং আনুসঙ্গিক চিকিৎসা সামগ্রী লাগবে। সেখানেও এক ধরণের উদাসীনতা ছিলো। আমি হাফ বলবো না। তারও নিচে ওয়ান থার্ড ইফোর্ট দেওয়া হচ্ছিল করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে। এরপর ছুটি নিয়ে যেটা হলো প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা লক ডাউনের বদলে ছুটি ঘোষণা করলেন। সেটাও আরেকটা বড় ভুল এবং বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত।’
ডা. রুহুল হক মনে করেন, ‘ওই ছুটির পর মানুষ বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করেছে। তারফলে সামাজিক সংক্রমণ আরো বেড়ে গেছে।’ গতকাল থেকে ঢাকা শহরকে যে বিভিন্ন জোনে ভাগ করার পদক্ষেপ, সে ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি মনে করেন যে, পূর্ব রাজাবাজারে যে লক ডাউন করা হয়েছে তা কোন কাজে আসছে না। একইভাবে এই জোন ভিত্তিক লক ডাউন কতটুকু কাজে দেবে, কে লক ডাউন করবে সেটা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। এটা আসলে বাস্তবে কোন উপকারে আসবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তিনি বলেন, ‘এতগুলো এলাকাকে লক ডাউন করার মতো সামর্থ্য এবং শক্তি আছে কিনা সেটি একটি বড় দেখার বিষয।’ তিনি মনে করেন, এখন বাংলাদেশে সীমিত সময়ের জন্য হলেও পূর্ণাঙ্গ লক ডাউন বা কারফিউ দরকার। তা না হলে মানুষ বাঁচানো কঠিন হবে।
প্রবীণ এই খ্যাতিমান চিকিৎসক বলেন, আজ ৫৩জন মৃত্যুবরণ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই কিনা সংখ্যাটা ১৫৩ হয়। তারপর ২০০ হতে পারে। আমাদের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্তও হচ্ছে। আর আক্রান্ত বাড়লে মৃত্যু বাড়বে। এটা অনিবার্য, এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কাজেই এখানে যারা ভ্রান্তিবিলাসের মধ্যে আছেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম হবে। তারা করোনা সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আরেকটি ভুল করছেন।
তিনি মনে করেন যে, করোনা মোকাবিলায় রাজনীতিবিদদের কোন ভূমিকা নেই। আমলারা সবকিছু চালাচ্ছে। তা্রা সঙ্কটের আসল উৎস বুঝছে না। সঙ্কটের গতি প্রকৃতি নিয়ে তাদের কোন ধারণা নেই। যার ফলে তারা একের পর এক ভুল এবং বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে। এই সমস্ত কারণে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।