অর্থনীতির খবর : মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় যা ধারণা করা হচ্ছিল, বিশ্ব অর্থনীতিতে তার চেয়েও ব্যাপক ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। আইএমএফ এর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত শতকের ৩০ এর দশকের মহামন্দার পর এ বছর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব।
বুধবার প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুকের জুন আপডেটে এমনটাই বলা হয়েছে। এই মন্দার মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদন যতটা সঙ্কুচিত হবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত এপ্রিলে পূর্বাভাস দিয়েছিল, এখন তা আরও বেশি সঙ্কুচিত হবে বলে তারা মনে করছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২.৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যখন কেবল চীনে ব্যাপক মাত্রা পেতে শুরু করেছে, তখন আইএমএফ ২০২০ সালে বিশ্বের জন্য ৩.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিশ্ব যে বড় ধরনের মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে, আইএমএফ এপ্রিলেই সে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তখন তারা বলেছিল, ২০২০ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৩.৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।
আরও দুইমাস পেরিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টায় আছে। কিন্তু অনেক উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশে ভাইরাস সংক্রমণের গ্রাফ এখনও ঊর্ধ্বমুখী।
গত দুই মাসের লকডাউনের মধ্যে দেশে দেশে উৎপাদন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসাব করে আইএমএফ এখন বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বের গড় উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পাবে ৪.৯ শতাংশ।
১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার সময় বিশ্বের উৎপাদন ১০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছিল। সেই হিসাবে আসন্ন পরিস্থিতিকে ত্রিশের মহামন্দার পর সবচেয়ে বাজে সঙ্কট হিসেবে দেখছে আইএমএফ।
আইএমএফের বলছে, মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে পারলে ২০২১ সালে হয়ত উৎপাদন বাড়বে, তবে তার গতি হবে ধীর।
এখন তারা আগামী বছরের জন্য ৫.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে, যদিও এপ্রিলে তাদের প্রাক্কলন ছিল ৫.৮ শতাংশ।
মহামারীর ধাক্কা ২০২১ সালে নতুন করে দেখা দিলে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে। আর এই হিসাবও যদি ঠিক থাকে, তাতে দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ বলছে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন একসঙ্গে তাদের অর্থনীতি সচল করার চেষ্টায় আছে। কিন্তু বিধিনিষেধ এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়মের কারণে বিনিয়োগ আর ভোগের পরিমাণে স্বাভাবিকভাবেই বড় ধাক্কা লেগেছে।
এ সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মোটেও বিপদমুক্ত হইনি। দুনিয়াজোড়া লকডাউন থেকে আমরা এখনও পুরোপুরি বের হতে পারিনি। সামনে যে গভীর অনিশ্চয়তা, নীতি নির্ধারকদের সেজন্য অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সঙ্কট মোকাবেলায় ধনী দেশগুলো ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্ষতি প্রশমনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় বহু কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হওয়া এখন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখা গেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক সহায়তার প্রয়োজন হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুকের উপাত্ত অনুযায়ী, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোই এ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
জুনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কমে যাবে। ইউরো জোনের ক্ষেত্রে তা হবে ১০.২ শতাংশ। দুই ক্ষেত্রেই এই হার আইএমএফের এপ্রিলের পূর্বাভাসের চেয়ে ২ শতাংশ পয়েন্ট করে বেশি।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ভাইরাস সংক্রমণের হার এখনও বাড়ছে। এসব দেশও মন্দার মধ্যে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।
আইএমএফের জুনের পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর ব্রাজিলের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৯.১ শতাংশ, মেক্সিকোর ১০.৫ শতাংশ এবং আর্জেন্টিনার ৯.৯ শতাংশ কমে যেতে পারে।
চীন অর্থনীতি সচল করার চেষ্টা শুরু করেছিল এপ্রিলে। এখন পর্যন্ত তারা ভাইরাসকে নতুন করে বড় আকারে বাড়তে না দিলেও অনেক ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বহাল রাখতে হয়েছে।
আইএমএফ বলছে, বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে কেবল চীনই ২০২০ সালে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির মুখ দেখতে পারে। তাদের উৎপাদন গতবছরের তুলনায় ১ শতাংশের মত বাড়তে পারে এ বছর।