জাতীয়

‘বিচারহীনতার কারণেই বাবা-মেয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছে’

By Daily Satkhira

May 01, 2017

ন্যাশনাল ডেস্ক : মর্যাদাহানি, লজ্জা, ক্ষোভ সর্বোপরি বিচারহীনতার কারণেই হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। সোমবার (১ মে) দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরে আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়া হযরত আলীর বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে এ দাবি করেন তিনি। এসময় তিনি আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহতের স্ত্রী হালিমা বেগমের অভিযোগ অনুযায়ী তার আট বছরের মেয়েকে যে নির্যাতন এবং মর্যাদাহানি করা হয়েছে সে বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছিল। সেটি একটি স্পেসিফিক অ্যালিগেশন (সুনির্দিষ্ট অভিযোগ) ছিল। কী কী ধরনের অন্যায় তার প্রতি করা হয়েছে সেগুলোও জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করেছে এবং বাদীর সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু পুলিশ কোনও লিখিত প্রতিবেদন দেয়নি।’

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এ অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে ট্রিট করে বিবাদীদের ধরার জন্য আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল। হালিমা বেগম জানিয়েছেন, ‘পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি।’ মেয়ের মর্যাদাহানির জন্য দুঃখ, ক্ষোভ, লজ্জা, গ্লানি থেকে হযরত আলী ও তার মেয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। সমাজ ও আইনের প্রতি বিশ্বাসের অভাবেই তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে।’

রিয়াজুল হক বলেন, ‘আইন বলেছে, রাষ্ট্র যাকে যে দায়িত্ব বা ক্ষমতা দিয়েছে তা যদি সে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে তবে তার দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে ধরা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন যারা করেছেন তাদের সঙ্গে পুলিশও এ দায় এড়াতে পারে না। বার বার বিচারহীনতার কারণে মানুষের মধ্যে অ্যাবনরমালিটি (অস্বাভাবিকত্ব) আসতে পারে। তাই বলে কাউকে পাগল ভাবা যাবে না। সে হিসেবে আলীর স্ত্রী হালিমাকে সত্যিকার অর্থে বদ্ধ পাগল বলা যাবে না। মেডিক্যাল সায়েন্স এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হযরত আলী মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বার বার সংগ্রাম করে ব্যর্থ হন। জনপ্রতিনিধি, সমাজ তার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এরকম অবস্থাতে পড়লে যে কোনও মানুষের মধ্যে পাগলামি ভাব আসতে পারে। তার সম্পত্তির ওপর একদল স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভ আছে। সম্পত্তিই তার কাল হয়েছিল। মেয়ের প্রতি নির্যাতনের বিচার না পেয়ে তিনি হতাশ হয়েছেন। আর আত্মহত্যা হতাশার একটি অভিব্যক্তি।’ কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে হযরত আলীর দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি নিজেরা দখল করতে অত্যাচার-জুলুম করেছে। পরে তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তারা (জনপ্রতিনিধি) এসবের বিচার করেননি। তাই তাদের ফৌজদারি বিচারের আওতায় আইনের কাঠগড়ায় সোপর্দ করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা আইনগত সহায়তা অব্যাহত রেখেছি। আমরা তাদের পক্ষে লড়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারহীনতার জন্য তারা যে জীবন দিল এটা অত্যন্ত লজ্জাকর। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ এখনও আসেনি। আইনের শাসন থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে আছি। যার কারণে একটা মানুষকে বিচার না পেয়ে জীবন দিয়ে বিচারের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হলো।’ আত্মহননকারী হযরত আলীর বাড়িটি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুস সবুর প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কর্ণপুর গ্রামের হযরত আলী ও তার মেয়ে আয়েশা আক্তার ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মত্যা করেন।