আজকের সেরা

মিলনের বাগান বাড়িতে পুত্রসহ সাংসদ রিফাত আমিনের দফায় দফায় অভিযান/ সব আ.লীগের কিছু লোকের ষড়যন্ত্র, প্রধানমন্ত্রীকে বলে তাদের সাইজ করবেন!

By Daily Satkhira

September 13, 2016

নিজস্ব প্রতিবেদক: কি ছিল গাড়ির মধ্যে? মিলনের বাগানবাড়িতেই বা কি রাখা ছিল? যা বের করতে খোদ সংসদ সদস্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও তিনি বাগানবাড়ির মূল দরজার তালা ভাঙতে পারেন নি। এ সময় তিনি বলেছেন ‘গাড়ির মধ্যে আমার ছেলে রুমনের অনেক কাগজপত্র ও টাকা রয়েছে। তাছাড়া গাড়িটি তো মিলন আমার ছেলের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি এই বাগানবাড়িতে থাকার লিখিত অনুমতিও দিয়েছে মিলন পাল’। এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে এলাকার পুরুষের প্রায় সবাই যখর ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে গিয়েছেন সেই সুযোগে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন ৩১২ এর সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিন তার ছেলে রাশেদ সরোয়ার রুমনসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ফের মিলন পালের বাগানবাড়িতে যান। তার উপস্থিতিতে বাড়ির গেটের তালা ভাঙা ও খোলা হয়। পরে তারা ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন কাগজপত্র ছাড়াও টাকা ও স্বর্নালংকার নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন সেখানে রাখা একটি অস্ত্রও নিয়ে যান তারা। এ সময় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ফেলে যান তারা। গ্রামবাসীকে রিফাত আমিন বলেন  ‘আমি এসপি সাহেবের অনুমতি নিয়ে এসেছি’।

তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন ‘আমি ওসির অনুমতি নিয়ে এসেছি। তাছাড়া ওসিকে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেও দিয়েছেন’। তবে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন এবং ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা দুজনেই বিষয়টি সম্পর্কে অস্বীকার করে বলেন ‘এটা মিথ্যা কথা। আমরা কাউকে এ ধরনের কাজের অনুমতি দেইনি’। মিলন পাল বর্তমানে সোনা চোরাচালান মামলায় জেলে আটক রয়েছেন। তার বরাত দিয়ে মিলনের স্ত্রী শম্পারানী পাল বলেন ‘আমার স্বামী কারও  নামে গাড়ি  লিখে দেন নি, এম

নকি বাড়িতে থাকবার জন্য মৌখিক বা লিখিত কোনো অনুমতিও দেননি’। তিনি বলেন ‘সাংসদ বলেছেন গাড়িটি  বরং আমার রুমনের কাছে থাকুক। তোমার কাছে থাকলে ওসি সিজ করে নেবেন। এসব কারণে তিনি নিজে বাড়িতে ঢুকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যান।’ স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাত ৮ টায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিন তার ছেলে রাশেদ সরোয়ার রুমন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট তামিম আহমেদ সোহাগসহ কয়েকজন মিলন পালের বাগানবাড়ি শহরতলির মাগুরা বাঁশতলার বিলাসবহুল বাড়িতে যান। তারা গেটের বাইরের তালা ভেঙে ফেলেন। কিন্তু ভিতর  থেকে তালা দেওয়ায় তারা ঢুকতে ব্যর্থ হন। মিলনের  ব্যবহৃত খয়েরি রংয়ের এলিয়ান প্রাইভেট কারটি কার শেডের ভেতরেই রয়েছে। সাংসদ বলেন এই গাড়িতেই রয়েছে মূল্যবান কাগজপত্র। এদিকে সোমবার রাতেই সাংসদ নিজে ও তার পুত্র রুমন মিলন পালের সুলতানপুরের আরেক বাড়িতে যেয়ে সবাইকে ডাকাডাকি করে তাদের কাছে বাগানবাড়ির চাবি চান। কিন্তু তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।  মিলনের স্ত্রী শম্পা বলেন, “মঙ্গলবার ভোরে রুমন ও তার স্ত্রী বেলী তার শাশুড়ি কল্পনা রানী পালের কাছে ফের চাবি চেয়ে ব্যর্থ হন। এ সময় তারা  কল্পনা রানীর হাত ধরে টানা হেচড়া করেন। এর কিছু সময় পর সকাল সাড়ে সাতটায় সাংসদ রিফাত আমিন ও তার ছেলে রুমনসহ  আবারও একটি

দল মিলন পালের বাগানবাড়িতে যেয়ে তালা ভেঙে/খুলে ভিতরে ঢোকেন। পরে তারা বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে তাদের পছন্দমত জিনিসপত্র বের করে নেন বলে অভিযোগ করেছেন মিলনের স্ত্রী শম্পা রানী। তিনি বলেন তারা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তালা খুলে মূল্যবান কাগজপত্র ওলট পালট করেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী অবস্থানকালে রিফাত আমিন বারবার পুলিশের বরাত দিয়ে বলেন, “এসপির অনুমতি নিয়ে আমি এখানে এসেছি।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় তারা একটি কক্ষ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে নিয়ে যান। তবে রিফাত আমিন বলেন সেখানে টাকা  ব্যাগ ও  পোশাক ছিল। লাবসা ইউপি’র সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, সাংসদ রিফাত আমিন তাকে ফোন করে বলেন ‘আমি মিলনদের বাগান বাড়িতে এসেছি। আমার সাথে রুমন ও সোহাগসহ অনেকে আছে। আমার জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য আমি ওদের বাড়ি ঢুকতে চাই। আপনি আসুন’। আবদুল হান্নান বলেন ‘আমি যেতে রাজি নই বলে জানিয়ে দিয়েছি। এতে সাংসদ ক্ষুব্ধ হয়েছেন’। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান ,

তিনি বেলা ১১ টার দিকে খবর পেয়ে মিলন পালের ওই বাড়িতে যান। এ সময় গ্রামবাসী তাকে জানিয়েছেন সাংসদ রিফাত আমিন নিজে উপস্থিত থেকে এই বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন।  দ্বিতীয় দফায় তার (ওসি) উপস্থিতিতে রুমনের স্ত্রী বেলী এলিয়ান গাড়ির কাঁচ ভেঙে জিনিসপত্র বের করে নেন। এদিকে এসব ঘটনার পর সকালে সাতক্ষীরা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি স্বপন কুমার শীল, গোষ্ঠ বিহারী সরকার এবং  নিত্যানন্দ আমিনসহ কয়েক নেতা মিলনের বাড়িতে যান। তারা তালা ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তারা সাংসদ রিফাত আমিনের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে মিলনের বাবা দেবদাস পাল বলেন, তার ছেলে জেলে আটক থাকার সুযোগে গত কয়েকদিন ধরে তার বাগান বাড়ির সম্পদ লুটপাট চলছে। তিনি বলেন এই বাড়ির খামারে থাকা ১৩ টি বড় জাতের গরু রুমন নিয়ে গেছে। এগুলো সে বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘আমার ছেলেকে জেল থেকে মুক্ত করাতে রুমন তার সাংসদ মার কথা বলে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। আরও ১০ লাখ টাকা এবং এলিয়ান প্রাইভেট কারটি চেয়েছেন’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গত রোববার রাতে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে এমপিপুত্র রুমন ভোমরায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এ সময় বিধ্বস্ত গাড়িটি ফেলে তিনি চলে আসেন সাতক্ষীরায়। এদিন  তিনি এক নারীসহ মিলন পালের ফাঁকা বাগানবাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। সোমবার সকালে এ খবর জানাজানি হলে গ্রামবাসী ওই বাড়ি ঘেরাও করে। পরে তাকে জেলা যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নানসহ কয়েকজন উদ্ধার করে আনার সময় রুমন গণপিটুনির শিকার হন। গ্রামবাসীর সন্দেহ এ সময় রুমন একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গরু বিক্রির টাকা বাগানবাড়িতে ফেলে আসেন। এরপর থেকে রুমন ও তার মা ওই বাড়িতে ফেলে আসা আগ্নেয়াস্ত্র এবং মিলন পালের খামারের গরু বিক্রির বিপুল অংকের টাকা বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে মঙ্গলবার সকালে সর্বশেষ অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গরু বিক্রির টাকা নিয়ে যান তারা। এসব  বিষয়ে জানতে সাংসদ মিসেস রিফাত আমিনের সাথে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে দুই দফা কথা হয়। তিনি বলেন ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার। আমি এখন আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কাজ করছি। তার জন্য আওয়ামী লীগের কিছু লোক সহ্য করতে পারছেন না। তাই তারা এসব অপপ্রচার দিচ্ছেন। আমি ভাবছি প্রধানমন্ত্রীকে বলে এদের সাইজ করে দেবো’। এদিকে আজ সকালে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন ‘ওই বাড়ির মধ্যে আমার রুমনের জিনিসপত্র ছিল। তাই আনতে যাওয়া আরকি। কোথাও কোনো ভাংচুর করা হয়নি। তালা খোলা বা ভাঙা কিছুই করা হয়নি। এসব মিথ্যা কথা বলে কি লাভ হবে। সাতক্ষীরা থানার ওসি আমাকে অনুমতি দিয়ে বলেছেন আপনি গেট কিংবা দেয়াল ভেঙে আপনার ছেলের জিনিসপত্র নিয়ে আসেন, আমি কিছু বলবো না। তাছাড়া ঢাকা থেকে শেখ সেলিম ভাই তো ভিডিও কনফারেন্স করে যা বলবার বলেই দিয়েছেন’। মিসেস রিফাত আমিন ১৩ টি বড় জাতের গরু বিক্রি করাসহ অন্য বিষয়  অস্বীকার না করেই বলেন ‘আমার ছেলে রুমন ও মিলন তো একসাথে  ব্যবসা করে’। অপরদিকে রুমন বলেন ‘আমি কোনো টাকা নেইনি। বরং আমিই মিলনকে জেল থেকে নিংস্বার্থভাবে মুক্ত করার চেষ্টা করছি’।