অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নানা অপকর্মের খবরে খবরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তার স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি। তবে স্বামীর পক্ষে সাফাই নয়, প্রতারণার জন্য শাস্তি চেয়েছেন রিম্মি।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে শাহেদের স্ত্রী রিম্মি বলেছেন, ‘আমি কোনোদিনও চাই নাই সে পার পেয়ে যাক। ওর পরিবারের সবাই বলেছে অপরাধ করলে শাস্তি পাবেই।’
শাহেদের স্ত্রীর দাবি, বিয়ের পর তার স্বামীর অপকর্মের বিষয়টি বুঝতে পারলেও সংসার টিকিয়ে রাখতে তাকে শোধারানোর সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সে অপকর্ম ছাড়েননি। কিন্তু এবার যা শুনেছেন তাতে তারা লজ্জিত ও দুঃখিত। গণমাধ্যমে একের পর এক অপকর্মের খবর প্রকাশ হওয়ায় তারা অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছেন।
প্রায় দু বছর ধরে শাহেদ পরিবারসহ থাকতেন ওল্ড ডিওএইচএসের চার নাম্বার সড়কের একটি বাসায়। সেখানে বসেই কথা বলেন তার স্ত্রী রিম্মি।
স্বামীর বিরুদ্ধে যখন বিস্তর অভিযোগ তখন লজ্জিত রিম্মি জানান, অভিযানের পর শাহেদ আত্মগোপনে থাকলেও ফোনে কথা হয়েছে। জানিয়েছেন তিনি নিরাপদে আছেন।
রিম্মি বলেন, ২০০৭ সালে বিয়ের পরের বছরই তার নানান অপকর্ম জানতে পারি। শোধারানোর সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু ছাড়েননি। তার এসব অপকর্মের জন্য এর আগে কয়েকবার চলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তার অনুরোধে আবার ফিরে আসি। আমারও দুর্বলতা ছিলো সন্তানের জন্য।
রিম্মি বলেন, গত তিন-চার বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের ধারণা ছিল তার পরিবর্তন আসবে। এখন যা দেখলাম তাতে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত। তার এসব কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ায় আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছি।
স্বামীর বিচার চান কি না- এমন প্রশ্নের জবাব শাহেদের স্ত্রী বলেন, আমি কোনোদিনও চাই নাই সে পার পেয়ে যাক। ওর পরিবারের সবাই বলেছে অপরাধ করলে শাস্তি পাবেই। আমি চাই না ও পার পেয়ে যাক।
গত ৭ জুলাই শাহেদের মালিকানাধীন উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। সব কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই ঘটনায় শাহেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আটক হলেও সাহেদ এখনো পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে র্যাব।
তার বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণার অনেকগুলো মামলা আছে দেশের বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় জেলও খেটেছেন শাহেদ।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তাদের প্রভাব দেখিয়ে অপকর্ম করে আসছিলেন শাহেদ এমন তথ্য জানা গেছে। কখনো সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কখনো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন সাহেদ। কোনো সরকারি পদে না থেকেও চলতেন ফ্লাগওয়ালা গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে থাকত গানম্যান।
শুধু তাই নয়, হাসপাতাল দুটির ভবন মালিকদের ভাড়া দিতেন না না শাহেদ। অতিরিক্ত বিল নিয়ে কথা বললে রোগীর স্বজনদের মারধর করা হতো বলেও অভিযোগ উঠেছে। যেখানে পরিবার নিয়ে থাকতেন সেই বাড়িওয়ালাকেও নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন সাহেদ।
শাহেদের বাড়ি সাতক্ষীরায় হলেও বেশ আগে সেখানকার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকায় চলে আসেন বলে জানা গেছে।