আওয়ামী লীগ

সাহেদ মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করে এমপি হতে চেয়েছিলেন

By Daily Satkhira

July 13, 2020

রাজনীতির খবর : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম প্রতারণার অভিনব সব কৌশল রপ্ত করেছিলেন। তার প্রতারণার লক্ষ্য শুধু ‘টাকা কামানো’ ছিল না; যশ ও খ্যাতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এসব পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম প্রতারণার অভিনব সব কৌশল রপ্ত করেছিলেন। তার প্রতারণার লক্ষ্য শুধু ‘টাকা কামানো’ ছিল না; যশ ও খ্যাতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এসব পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমেও তার সরব উপস্থিতি ছিল। তার রাজনৈতিক অভিলাষও ছিল। তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল এমপি (সংসদ সদস্য) হওয়া। এ জন্য ঢাকা থেকে মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করে এলাকায় (সাতক্ষীরা) তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। প্রকাশ্যে প্রচারে না গেলেও সুকৌশলে তিনি কাজ করছিলেন। এদিকে, রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের ছয় দিন পরও সাহেদ অধরা রয়ে গেছেন। রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রিজেন্টের সাহেদ করিমের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। না হলে গ্রেফতার হতে হবে। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। স্কুলজীবনের পর তিনি সাতক্ষীরা ছাড়ায় এলাকার অধিকাংশ মানুষই তার সম্পর্কে জানতেন না। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে যান। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালে পরীক্ষা ছাড়া করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্টসহ সাহেদের নানা অপকর্মের বিষয়টি উঠে আসে। এতে সাতক্ষীরায় আলোচনার কেন্দ্রে আসে তার নাম। সাহেদের উত্থান নিয়েও উঠে আসে নানা তথ্য। জানা যায় তার রাজনৈতিক অভিলাষের কথা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহেদের মা সাফিয়া করিম ২০১০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ পরিচয় কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সাহেদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনোই তার অংশগ্রহণ ছিল না। এরপরও ২০১৮ সালের ৯ নভেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ জাতীয় সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের ১৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। তাদের সবার নাম জানা গেলেও সাহেদ করিমের নাম ছিল অনেকটা অনুচ্চারিত। ঢাকায় মনোনয়ন ফরম জমাদানের সময় সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগ নেতারা জানতে পারেন সাহেদও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। যদিও তিনি মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সাহেদ মূলত ঢাকা থেকে মনোনয়ন ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি বিভিন্নভাবে ‘টাকাও ছড়িয়েছেন’। এলাকায় কোনো প্রচার না করে ও নেতকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখেও তিনি ক্ষমতা ও টাকার দাপটে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। তাদের ধারণা, সাহেদ অনেক আগে থেকে এমপি হওয়ার ‘ধান্দায়’ ছিলেন। কারণ, কোথাও কোনো প্রচার না থাকলেও তিনি এলাকায় তার পছন্দের একটি অংশের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি নিজেকে মানবিক প্রমাণে ও এলাকায় ‘নাম ছড়াতে’ ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে সাতক্ষীরার অনেককে বিশেষভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। এ ছাড়া টেলিভিশন টকশোয় সাহেদের সবর উপস্থিতির পেছনেও বড় উদ্দেশ্য ছিল ‘বড় বড় কথা’ দিয়ে নিজেকে পরিচিত করে তুলে এমপি নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাহেদ করিম জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য তো নন। আওয়ামী লীগ সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আসলে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা দেয়ার সময় থাকে খুবই কম। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। সে জন্য তখন সেভাবে বাছ-বিচার করে দেখার সুযোগ থাকে না। আর প্রতারকরা এ সুযোগটিই কাজে লাগায়। তিনি বলেন, সাহেদের কোনো দল নেই। এরা প্রতারক, বাটপার, চিটার, অমানুষ। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। বিশ্বে এরা বাংলাদেশের মান-মর্যাদা নষ্ট করে দিচ্ছে। সাহেদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তার হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কখনও কোনো প্রতারক কোনো রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশের চিন্তাও না করে। তিনি আরও বলেন, মাঠের কর্মীরা কখনও দলের ক্ষতি করেন না। এ ধরনের ব্যবসায়ী, আমলা, প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে দলের ক্ষতি করে। এদের ব্যাপারে আগামীতে আমরা আরও কঠোর হব। এদের তালিকা হবে। শাস্তির আওতায় আসতেই হবে। এটি নেত্রীর নির্দেশনা। অধরা সাহেদ, ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছেন : উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের ছয় দিন পরও অধরা রয়ে গেছেন সাহেদ। সাহেদ দেশে আছেন কি না, সেটা নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রগুলো বলছে, ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছেন ধূর্ত সাহেদ। তাকে আটকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সাতক্ষীরায়ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ সাহেদ করিমের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে চলছে বিশেষ নজরদারি। সাহেদ দেশ ছেড়েছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সাহেদের ঘটনা তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, আমাদের সীমান্তের বাস্তবতায় দেশ ত্যাগ করাটা অসম্ভব কিছু নয়। তবে আমরা লেগে আছি। এত সহজে সে পার পাবে না। সাহেদের আটকের বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাহেদ ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছেন। গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি। সে যাতে দেশ ছাড়তে না পারে, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। উত্তরার অফিস থেকে পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। আশা করছি, আটকের বিষয়ে শিগগির তথ্য দিতে পারব। এ বিষয়ে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। সাহেদের বিদেশে পালানোর কোনো সুযোগ নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রিজেন্টের সাহেদ করিমের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। না হলে গ্রেফতার হতে হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, সাহেদ কোথায় সেটা সাহেদই জানে। তার উচিত আত্মসমর্পণ করা। সাহেদকে র‌্যাব-পুলিশ খুঁজছে। আশা করি, খুব শিগগির তার গ্রেফতারের বিষয়টি আপনাদের জানাতে পারব। সাহেদ কী ধরনের অন্যায় করেছেন সেগুলো তদন্ত হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলে আপনাদের জানাতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, সাহেদ যাতে সীমান্ত পেরিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উত্তরা থানা সব সময় সাহেদকে শেল্টার দিয়েছে এগুলো সরকার আমলে নিচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি উদ্ঘাটনের পর কেউ তাকে শেল্টার দেয়নি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার অপরাধ বের করেছে। তাকে অবশ্যই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব। একই স্থানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সাহেদ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরপর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন হাসপাতালের মালিক সাহেদ। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‌্যাব। সূত্র: দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে