খেলা

চ্যাম্পিয়নস লিগ ; রোনালদোর হ্যাটট্রিকে রিয়ালের ফাইনাল মঞ্চ তৈরি

By Daily Satkhira

May 03, 2017

তিনি থামছেন না। তাকে থামানো যাচ্ছে না। বায়ার্ন মিউনিখকে একাই তছনছ করে দিয়ে এবার আঘাত হানলেন অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের ওপর। বলা চলে চ্যাম্পিয়নস লিগে চলছে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ‘শো’। তার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে সেমিফাইনালের প্রথম লেগেই একরকম ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে রিয়াল। উত্তেজনাকর মাদ্রিদ ডার্বির সব আলো নিজের ওপর নিয়ে পর্তুগিজ যুবরাজ আবার প্রমাণ করলেন, কেন তিনি বিশ্বসেরা। আর তার আগুনে পুড়ে ছারখার অ্যাতলেতিকো আরও একবার ধাক্কা খেল ৩-০ গোলের হারের।

এই তো দিন কয়েক আগের কথা, কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল হারিয়ে দিল বায়ার্ন মিউনিখকে। দুই লেগের ওই লড়াইয়ে রোনালদো লক্ষ্যভেদ করেছিলেন পাঁচবার। প্রথম লেগে জোড়া লক্ষ্যভেদের পর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগে করেন হ্যাটট্রিক। চ্যাম্পিয়নস লিগের আগের ম্যাচ যেখানে শেষ করেছিলেন পর্তুগিজ যুবরাজ, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে যেন শুরু করলেন সেখান থেকেই। মঞ্চ ও প্রতিপক্ষ আলাদা হলেও রোনালদো ঝরালেন তার গোলের বৃষ্টি। আরও একটি হ্যাটট্রিক পূরণ করে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার সবশেষ তিন ম্যাচে নিজের গোলসংখ্যা নিয়ে গেলেন ৮-এ। একই সঙ্গে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে করলেন গোলের ‘হাফসেঞ্চুরি’!

ঘরের মাঠে শুরু থেকেই রিয়াল ছিল আক্রমণাত্মক। নগরপ্রতিপক্ষ অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে শুরুর বাঁশি বাজার পর বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হলেও প্রথম গোলের অপেক্ষায় বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি রিয়ালকে। দশম মিনিটেই স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় রোনালদোর লক্ষ্যভেদে। সের্হিয়ো রামোসের ক্রস হেড করে প্রতিহত করেছিলেন অ্যাতলেতিকো ডিফেন্ডার সাভিচ, যদিও বল চলে আসে কাসিমিরোর কাছে। ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার ফিরতি বলে আবার ক্রস করলে লাফিয়ে উঠে হেডে জালে জড়ান রোনালদো।

১৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো রিয়ালের, হয়নি অ্যাতলেতিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের দুর্দান্ত সেভে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেছিলেন রাফায়েল ভারান, বল গোলপোস্টের ভেতর থাকলেও ঝাপিয়ে তা প্রতিহত করেন ওবলাক। তবে মিনিট খানেক পর অ্যাতলেতিকো গোলরক্ষকের কৃতিত্বকে ছাড়িয়ে যান রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। সফরকারীদের সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ ভেস্তে দেন অসাধারণ সেভে। কোকের ডিফেন্সচিড়া পাস বক্সের ভেতর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন কেভিন গামেইরো, সামনে ছিলেন কেবল নাভাস। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ানেও এই ফরাসি স্ট্রাইকার পেরে উঠেননি নাভাসের সঙ্গে। গোটা ম্যাচে ওটাই ছিল অ্যাতলেতিকোর সবচেয়ে সুন্দর সুযোগ।

সুযোগ নষ্টের খেসারত অ্যাতলেতিকোকে বেশি দিতে হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম ৪৫ মিনিট ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগের সুবিধার কথাই হয়তো ভেবেছিল তারা। রিয়াল এক গোলে এগিয়ে থাকলেও ফিরতি লেগটা যে তাদের ঘরের মাঠে। কিন্তু যে দলে রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড় আছে, সেই দলের বিপক্ষে খুব বেশি নির্ভার থাকার সুযোগও থাকে না প্রতিপক্ষের। থাকতে পারেনি অ্যাতলেতিকোও। মাদ্রিদের রাতের আকাশ আলোকিত করে রোনালদো উড়ালেন শ্রেষ্ঠত্বের পতাকা। বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরে ৭৩ ও ৮৬ মিনিটে আরও দুই গোল করে তৈরি করে দিলেন রিয়ালের ফাইনাল মঞ্চ। ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অ্যাতলেতিকো খেলায় ফিরবে, এমন বাজি ধরার লোকের সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা নয়!

৭৩ মিনিটে রোনালদোর দ্বিতীয় গোলটা ছিল দেখার মতো। বক্সের ঠিক বাইরে করিম বেনজিমার কাছ থেকে বল পেয়ে ডিফেন্ডার সাভিচকে ফাঁকি দিয়ে ভলিতে পর্তুগিজ অধিনায়ক যে শটটা নিলেন, সেটা ঠেকানোর কোনও সুযোগ ছিল না ওবলাকের। আর খেলা শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে অ্যাতলেতিকোর কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। যাতে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের মালিক লিওনেল মেসিকে ধরে ফেলেন রোনালদো সপ্তম হ্যাটট্রিক করে।

রোনালদোময় রাতটা শুধুই রিয়ালের। মাদ্রিদের এক অংশ যখন উল্লাসে মেতে, অন্য অংশে তখন শোকের স্তব্ধতা। চ্যাম্পিয়নস লিগটা অ্যাতলেতিকোর কাছে যে হাহাকারই হয়ে রইল। ২০১৪ ও ২০১৬ সালের ফাইনাল হারের পর ওই রিয়ালের বিপক্ষেই আরও একটি হার। যে হারে এবার ফাইনাল স্বপ্নটাও হয়ে গেল ফ্যাকাশে।