নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাতক্ষীরার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জ্বর সর্দি কাশিসহ করোনার উপসর্গের রোগী রয়েছে। অথচ পরীক্ষার বিষয়ে উদাসীন রয়েছে অনেকেই। কোন কোন বাড়িতে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পরও লকডাউন করা হয়নি। আবার কোন বাড়িতে থেকে শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে পরীক্ষা করা হয়নি। জানা গেছে, বর্তমানে সাতক্ষীরার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই করোনা উপসর্গের রোগী রয়েছে। এর অধিকাংশই সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি মনে করে বাড়িতেই বসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই করোনা উপসর্গ বুঝেও বাড়ি লকডাউনের ভয়ে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না। অনেকেই করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। বিধায় হাসপাতালে নমুনা দিতেও অনীহা রয়েছে অনেকের।
সোমবার ২০ জুন পর্যন্ত সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৩৪ জন। সাতক্ষীরায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০২ জন। এতে মানুষের আতংক থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি মানতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা দিন দিন বেড়ই চলেছে এখানে। অথচ প্রথম দিনে করোনা মুক্ত জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা ছিলো প্রথম সারির দিকে। কিন্তু বর্তমানে আক্রান্ত মৃতে্যুর দিক দিয়ে সাতক্ষীরা এখন প্রথম সারিতে। গত ১২ জুলাই পর্যন্ত ওই সপ্তাহে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সাতক্ষীরা জেলায় সর্বোচ্চ ছিল। একমাত্র জেলা যেখানে সাপ্তাহিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হার শতভাগের বেশি ছিল। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, প্রথম দিকে সাতক্ষীরায় কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন প্রশাসন বেশ তৎপর ছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে এক ধরনের ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কোন দায় নিচ্ছেন না, সবাই নিজেদের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছেন। অথচ আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম যে, স্থানীয় সরকারের যারা ইউপি সদস্য আছেন, যাদের সাথে গ্রামের সাধারণ মানুষদের যোগাযোগ আছে তাদেরকেসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যারা কমিউনিটি লিডার আছেন তাদেরকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে কমিটি করে দিতে। এতে করে মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে বোঝানো যেমন সহজ হত, তেমনি কোন বাড়িতে কে অসুস্থ হচ্ছেন বা কার কি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জানা যেত। কিন্তু সময়মত তা না করে আমলাতান্ত্রিকভাবে সংক্রমণ মোকাবিলায় হাস্যকর সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে যা মানুষকে মানানো যায়নি। অন্যদিকে সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন আক্রান্ত জেলা থেকে অবাধে বিপুল সংখ্যক মানুষ সাতক্ষীরায় প্রবেশ করল, যার দায় কেউ নিলেন না। এসব মানুষদের মাধ্যমে সাতক্ষীরার সর্বত্র আজ করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। জনসচেতনতার চেয়ে দুর্বল ব্যবস্থানাকেই আমরা বেশি দায়ী করব আজকের এ পরিস্থিতির জন্য। সাতক্ষীরার একাধিক বাড়িতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষের বাড়িতে জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী রয়েছে। তাদের অধিকাংশের করোনা উপসর্গ। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, গলায় ব্যাথা, জ্বর ১০২ এর নিচে নামছে না, খাওয়ার কোনো রুচি নেই, প্রচণ্ড দুর্বল, ওষুধ খেয়েও জ্বর নামানো যাচ্ছে না, থেমে থেমে পাতলা পায়খানা হচ্ছে, বমি বমি ভাব। এক কথায় করোনার যাবতীয় লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, বর্তমান মৌসুমে জ্বর, সর্দি, কাশি একটু বেশি হয়ে থাকে। সাতক্ষীরায় এত বেশি আক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, নারায়নগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসার ব্যক্তিদের দ্বারায় সাতক্ষীরায় কমিউনিটি সংক্রমনটা ঘটেছে। আমাদের সচেতনতার অভাবের কারণেই বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত পরিবারের লোকজনও এ বিষয়ে উদাসীন। নার্স, সরকারিজীবিসহ অনেকেই আমাকে ফোন করে বলেন, আমার বাড়িতে একজন করোনা রোগী রয়েছে দয়া করে লকডাউন করবেন না। লকডাউন করলে তো ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। বরং ওই পরিবারটি সুরক্ষিত থাকবে পাশাপাশি অন্যদের আক্রান্তের সুযোগ থাকবে না। মানুষ সচেতন না হলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে আটকানো সম্ভব না। যেমন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কিছু সময় পর পর হাতে সাবান দেওয়া। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক কমিটি করা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে সোমবার দুপুর থেকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।