সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ছাগল চুরির অপরাধে গ্রাম্য শালিসে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি

By daily satkhira

July 21, 2020

নিজস্ব প্রতিনিধি : ছাগল চুরির অপরাধে গ্রাম্য শালিসে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শালিসে ১৫ বছর বয়সী এক এতিম কিশোরকে নির্যাতন করে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এতিম কিশোরকে অমানবিকভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় মাসুদ রানা (১৭) নামে অপর এক কিশোরকে বেধড়কভাবে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ অপরপক্ষের। শনিবার বিকালে পৌরসভার রসূলপুর এলাকার পূর্বপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন এঘটনা ঘটে। এসময় পৌর কাউন্সিলর ফারহা দিবা খান সাথী ও শেখ শফিক উদ দৌলা সাগর উপস্থিত ছিলেন।

রসুলপুর এলাকারা রোজিনা খাতুন, কবির হোসেন, দৌলত আলী, রাশিদুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বাপ হারা এতিম কিশোর সজীব হোসেন রসূলপুর এলাকায় অবস্থিত তার নানা মোসলেম সরদারের বাড়িতে থাকেন। তার মা মহসিনা খাতুন পার্শ^বর্তী একটা হোটেলে কাজ করে সংসার চালান। মাস খানেক আগে রসূলপুর এলাকার মরিয়ম খাতুনের একটি গৃহপালিত পশু (ছাগল) চুরি হয়। তবে সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে সালিশ ডাকে মরিয়মের পরিবার। সালীশের আগে চুরিকৃত ছাগল ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন সজীব হোসেন। স্থানীয় গ্রাম্য সালীশের বিচারে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটিও মানতে রাজি ছিলো সে। তবে সালিশে উপস্থিত হওয়ার পরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এসময় কিশোর সজীব হোসেন তাদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও এলোপাথাড়িভাবে জিআই পাইপ দিয়ে মারপিট করা হয়। এসময় সজীব হোসেন মাটিতে পড়ে গেলেও তাকে জিআই পাইপ দিয়ে পিটানো হয়। ঘটনার একপর্যায়ে এতিম কিশোর সজীব হোসেনের উপরে অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে এলে স্থানীয় মাসুদ হোসেন নামে অপর এক কিশোরকেও মারপিট করে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে। এসময় মাসুদ হোসেনের মাথা ফেটে রক্তপাত বের হতে থাকলে এঘটনার কোন প্রতিবাদ করেননি কাউন্সিলরা। বরং থানা পুলিশ করলে তাদের নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগি পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে ছাগল চুরির অপরাধে সজিব হোসেনকে ৬হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে সজীব তার নানার বাসায় থাকতে পারবেন না। বরং তার পৌর এলাকা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা জানান কাউন্সিলরা। তবে সে যদি জরিমানার টাকা না দেয় তাহলে তাকেসহ তার পরিবারের সকলকে দেখে নেওয়ার হুমকীও দেওয়া হয়। এসময় শালিসে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা চুরির অপরাধে সজীব হোসেনের মামী রোজিনা খাতুনকে অভিযুক্ত করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ করেন। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হার্ট স্ট্রোক করেন রোজিনা খাতুন। এখন তিনি (রোজিনা খাতুন) সহ মাসুদ হোসেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান ভূক্তভোগি পরিবার। এবিষয়ে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা সাগর বলেন, ছাগল চুরি করার অপরাধে তাকে আমি মারধর করেছি। তবে মারধর গুরুতর ছিলো না জানিয়ে তিনি বলেন, সজীবের পা ভাঙার কোন প্রশ্নই আসেনা। কেননা, আমি তাকে তিনবার লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছিলাম। দুইবার লাঠি দিয়ে তার দেহে আঘাত করলেও অপরটা লাগেনি বলে জানান তিনি। তবে শালিস শুরু হওয়ার আগে দু’পক্ষের ভিতরে বিরোধ বেধেঁছিলো। আমরা কোনকিছুর বুঝে ওঠার আগে স্থানীয় এরশাদ, কবির হোসেনসহ আরো কয়েকজন মাসুদ হোসেনকে মারধর করে। এসময় আহত মাসুদ হোসেনের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছেন বলে জানান তিনি। এবিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর ফারহা দিবা খান সাথী জানান, সজীব হোসেন ও মাসুদ হোসেনকে কোন মারধর করা হয়নি। তবে কাউন্সিলর সাগর ভাই সজিব হোসেনকে অল্প একটু মারধর করছিলো। তবে সে মারধরে সজীব হোসেনের পা ভেঙে যাবেনা বলে জানান তিনি। এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তিনি। তবে গ্রাম্য শালিসে জনপ্রতিনিধিরা কোন শিশু কিশোরকে মারধর করতে পারেননা। কিন্তুু, ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে জানান তিনি।