ফিচার

বৃষ্টির গল্প -শেখ মফিজুর রহমান

By Daily Satkhira

July 26, 2020

একফোঁটা বৃষ্টি বয়ে আনে এক ফোঁটা জীবনের জয়ধ্বনি পৃথিবীর বুকে, প্রাণীকুলের কাছে। তাই বৃষ্টি মানে সৃষ্টির আদি গল্প। ঝুমবৃষ্টি, ধোঁয়া ওঠা কফির মগ প্রিয়জনের মিষ্টি কথন, স্মৃতির আলাপন, এক রােমান্টিক গল্পের আমেজ! কিংবা ছুটির দিনের সকালের বৃষ্টি-খিচুড়ির আয়ােজন সরিষা ইলিশ, লােভাতুর খাবারের নানাপদ, এ এক ভিন্ন রকম বৃষ্টির গল্প। বৃষ্টির ছোঁয়া নিতে হাত পাতা তরুনীর চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে অনেকের বুকের ভেতরে পাড় ভাঙ্গে কিন্তু বৃষ্টির পানির তােড়ে যার ঘরের পাশের গাঙ ভাঙ্গে তাদের গল্পটা একদমই ভিন্ন। কাব্যিক দ্যোতনা নিয়ে বৃষ্টি তাদের জীবনে আসে না গল্পটা এখানে বেঁচে থাকার, টিকে থাকার। টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টির রােমান্টিক শব্দের বিপরীতে বাচতে হয় তাদের টিনের চালের উপরে দিনের পর দিন। শাপলা শালুক তােলার রঙিন গল্পের নৌকা হয়ে ওঠে জীবন চলার একমাত্র বাহন। তাই বর্ষা কালের গল্পটা একদমই ভিন্ন এখানে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নাম দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে যারা আমিষের গন্ধ খোঁজে আর এই বৃষ্টির মাঝে যারা কর্দমাক্ত পথ পেরিয়ে কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে ছােটে তাদের জন্য একদমই ভিন্ন গল্পটা। বর্ষাকালে আসলে যারা প্রেমিকার হাতে কদম ফুল দেখে, তাদের দৃষ্টি ভিন্ন যারা কাজের অভাবে চোখে সর্ষে ফুল দেখে তাদের থেকে। নব দম্পতির জন্য বৃষ্টি যতটা রােমাঞ্চকর ঠিক ততটাই বিরক্তিকর তার জন্য যাকে রুটি রুজির সন্ধানে ছেঁড়া ফুটো ছাতা নিয়ে কাজে বেরুতে হয় সাত সকালে। বারান্দার গ্রীলে জমা বৃষ্টির ফোঁটা তাই আমার কাছে মুক্তোর দানার মতাে মনে হলেও দিনের পর দিন কাজ না পাওয়া কারাে কাছে সেটাই কষ্টের অশ্রুবিন্দু। গল্প-কবিতায় এই বৃষ্টি যতটা প্রিয়ার পরনের নীল শাড়ি হয়ে ধরা দিয়েছে নিত্য জীবন যুদ্ধে সংগ্রামরত কর্মবীর খেটে খাওয়া মানুষের বেদনার নীল রঙ হয়ে ততােটা ধরা দেয়নি। বৃষ্টির গল্পটা তাই একদমই ভিন্ন তােমার কাছে, আমার কাছে আর বৃষ্টি দিনের আরামদায়ক আবহাওয়াতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিক চিক করা খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষের কাছে। বৃষ্টি এই ধরনীতে নেমে আসুক আশির্বাদ হয়ে ছনের চালে, টিনের ঘরে, দোতলার ব্যালকনিতে সুখস্মৃতি হয়ে সবার মাঝে, কারাে কান্না কারাে রান্নার ব্যাঞ্জনা হয়ে নয় বৈষম্যহীন ভালােবাসা ছড়াক সবার মাঝে বৃষ্টি হােক সৃষ্টির আশীর্বাদ।

* শেখ মফিজুর রহমান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা।