সাতক্ষীরা

বিশ্ব ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে বেডস্ এর ম্যানগ্রোভ বনায়ন কর্মসূচী

By daily satkhira

July 27, 2020

প্রেস বিজ্ঞপ্তি : ম্যানগ্রোভ তথা সুন্দরবনের এর গুরুত্ব অবর্ণনীয়। ম্যানগ্রোভ শুধু উপকূলীয় অধিকাংশ মানুষের জীবীকারই উৎস নয়; বরং প্রতিকূল আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঢাল হিসাবে উপকূলবাসীকে যুগ যুগ ধরে এটি রক্ষা করে আসছে। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাস বাদ দিলে বিগত কয়েক দশক ধরে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় নদীভাঙনই হচ্ছে অন্যতম প্রধান সমস্যা। আবার নদীভাঙণ রোধে এই ম্যানগ্রোভের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। সর্বোপরি কার্বন শোষণ ও পরিবেশকে স্থিতিশীল রাখতে ম্যানগ্রোভ অদ্বিতীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আশির দশক থেকে বিশ্বব্যাপী ম্যানগ্রোভ হ্রাস পেতে থাকে এবং প্রতিবছর পৃথিবী থেকে প্রায় ২.১% ম্যানগ্রোভ হ্রাস পাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো মানুষের অত্যাধিক মাত্রায় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, চিংড়ি চাষ, বাসস্থান তৈরি এবং নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমগ্র বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৫ সালে ইউনেস্কো ২৬ জুলাই দিনটিকে বিশ্ব ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পৃথিবীতে বিদ্যমান ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ করা এবং ম্যানগ্রোভ রোপণ ও পুনুরুদ্ধারের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভের পরিধি বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশকে স্থিতিশীল রাখা। বিশ্ব ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা দিবস উৎযাপনে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস্)-আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। তারা আরো বলেন, ‘ শুধুমাত্র ম্যানগ্রোভ রোপণ করাই আমাদের কাজ নয়, বরং রোপিত ম্যঅনগ্রোভকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য’।

গত ২৬ শে জুলাই ২০২০ রবিবার বেডস্ বিশ্ব ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা দিবস পালন উপলক্ষে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নে এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে দুইটি ভিন্ন কর্মসূচী আয়োজন করে। আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কণ এবং ম্যানগ্রোভ রোপণ কর্মসূচী। মূলত বেডস্ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৩টি তিনটি প্রকল্পর আওতায় ম্যানগ্রোভ রোপন কর্মসূচী পালিত হয়। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় দাতা সংস্থা জাপান ফান্ড ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট (জেএফজিই) এর অর্থায়নে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ৪০ জন গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে ৫০০০ ম্যানগ্রোভ রোপন ও ম্যানগ্রোভ বীজ বপন করা হয়। অন্যদিকে জাপান সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক তৃণমূল প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার দাকোপ উজেলার বাণিশান্তা ইউনিয়নের উত্তর বাণিশান্তা গ্রামে প্রায় ১০০ জন গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে ১৫০০ ম্যানগ্রোভ রোপিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে সর্বমোট ২০,০০০ ম্যানগ্রোভ রোপিত হবে। আবার দাতা সংস্থা ফেডারেল মিনিস্ট্রি অফ ইকোনোমিক কো-অপারেশান এ্যান্ড (বিএমজেড) এর অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল এ্যাকোয়াকালচার ইন ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম প্রকল্পের আওতায় বাণিশান্তা ইউনিয়নের পশ্চিম ঢাংমারী গ্রামের ঘেরের আইলে ৪০ জন গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে ১০০০ ম্যানগ্রোভ রোপিত হয়। প্রকল্পটি হতে এবছর মোট ১২,০০০ ম্যানগ্রোভ রোপণ করা হবে।

ম্যানগ্রোভ বনায়নের এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন ১৮০ জন গ্রামবাসী, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের এম.পি. মিস গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বাণিশান্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবু সুদেব কুমার রায়, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির বিভাগীয় সমন্বয়ক জনাব মাহফুজুর রহমান মুকুল, বেডস্ এর কর্ণধার প্রধান নির্বাহী জনাব মো. মাকছুদুর রহমান, কর্মসূচী সমন্বয়কারী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৌমিত্র চক্রবর্তী, ফিল্ড এডভাইজার রজতশুভ্র গাইন, মাঠকর্মী প্রশান্ত দেব, বিশ্বজিত গাইন, হরপ্রসাদ সরকার ও বিপুল মিস্ত্রী। কর্মসূচীর শেষে উপস্থিত সকলকে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষনে এগিয়ে আসতে উদাত্ত আহবান জানানো হয়।