সাতক্ষীরা

অভিভাবকহীন সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ ॥ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

By daily satkhira

August 12, 2020

নিজস্ব প্রতিনিধি : কোন অভিভাবক ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ। সর্বশেষ জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও কোন কমিটি ছাড়াই চলছে ছাত্রলীগের কার্যক্রম। যদিও সর্বশেষ জেলা কমিটিও ছিল মাত্র ৩ সদস্যের। ফলে সাতক্ষীরায় দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের মানসম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। দীর্ঘদিন জেলা কমিটি না থাকায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জেলায় ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরায় পদপ্রত্যাশীদের সচেতনামূলক প্রচারণাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এবং বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। তবে কোন নেতৃত্ব না থাকায় স্ব স্ব উদ্যোগে এসব কার্যক্রম চালিয়েছেন ছাত্রলীগের কমিটির পদপ্রত্যাশীরা। জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ২০১৭ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সম্মেলনের মাধ্যমে তানভীর হুসাইন সুজন ও এহছান হাবিব অয়ন নেতৃতাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে সাক্ষাতকার নিয়ে যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেয়ার ঘোষণা দিলেও অনেকটা গোপনে ঢাকা থেকে প্রেস রিলিজ দিলে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এমন একজনকে পদায়িত করা হয় যিনি কখনও সাতক্ষীরা জেলায় ছাত্রলীগের কোন ইউনিটের নূন্যতম সদস্য পদও ছিল না। ওই বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে রেজাউল ইসলাম রেজাকে সভাপতি, সৈয়দ সাদিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে এবং আসিফ শাহবাজ খানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি অনুমোদন দেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জি এম জাকির হোসেন। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটির ভাঙ্গাগড়ার খেলায় মত্ত ছিলো বলে বারবার অভিযোগ ওঠে। এমনকি কোন কোন উপজেলা কমিটিতেও শিবিরের সদস্যরাও পদ পেয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীরা। সুমাইয়া শিমু নামক এক মেয়ের সাথে যোগসাজস করে সাতক্ষীরার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও উর্দ্ধতন সরকারি চাকুরিজীবীদের জিম্মি করে ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। এছাড়া কালিগঞ্জ থেকে চাঞ্চল্যকর ২৬ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে সাদিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে সাদিকের অন্যতম দুই সহযোগী ছিনতাই এর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সাইফুল ইসলাম ও দ্বীপ নিহত হয়। সাদিক এবং তার সহযোগী সুমাইয়াকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ জেলা পুলিশ। এঘটনায় ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেন দেন। সাথে সাথে পদপ্রত্যাশীদের দ্রুত জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহবান জানান। সে অনুযায়ী জেলা থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ৫০ টি বৃত্তান্ত জমা পড়েছে বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছেন। তবে দু:খের বিষয় হলো ৮মাস অতিবাহিত হলেও ৫০ জনের মধ্যে হতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে আজও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। পদ প্রত্যাশা করেছেন প্রায় ৫০ জন। কিন্তু মাঠে রয়েছে মাত্র ৮/১০ জন ছাত্রলীগের নেতা ও তাদের কিছু অনুসারী। তবে মাঠে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ২/১ জন ব্যতীত বাকীরা পরিচ্ছন্ন এবং ক্লিন ইজেমের বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাসে কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের একজন পদ প্রত্যাশী নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কিন্তু এভাবে দীর্ঘ ৮ মাস কমিটিহীন অবস্থায় সাতক্ষীরা ছাত্রলীগকে কেউ দেখিনি। নিস্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমাদের মধ্যে অনেকই ইতোমধ্যে রাজনীতির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরির দিকে ঝুঁকছেন। এ সুযোগে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সাতক্ষীরায় মৌলবাদীরা ভেতরে ভেতরে আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন। সাতক্ষীরা পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিশান বলেন, আমাদের সাতক্ষীরা জেলাতে দীর্ঘদিন যাবৎ ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার কারণে আমাদের যোগ্য নেতৃত্ব থাকার পরও কমিটি না দেওয়ার কারণে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ উপজেলাতে কমিটি থাকলেও সেটা জেলার কাছ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর নির্দেশনা মোতাবেক চলছে। কিন্তু আমদের বহুমাত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ এর আশু কমিরটি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। তাই আল নাহিয়ান খান জয় ভাই ও লেখক ভট্টাচার্য দাদার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী আক্তার হোসেন বলেন, এই মহাদুর্যোগের সময় সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে যে কোন ধরনের দুর্যোগ বা আন্দোলন সংগ্রামে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং অতি দ্রুত সাতক্ষীরায় একটি শক্তিশালী কমিটি দেওয়ার দাবি জানাবো কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হুসাইন সুজন বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ হ-য-ব-র-লা অবস্থায় রয়েছে। কমিটি না থাকলেও সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমার দেখা নেতাকর্মীদের ৭/৮ জন মাঠে রয়েছে। তাদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান আশিক, মহিদুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান শাওন, আসিফ শাহবাজ খান, সুমন হোসেন, কাজী শাহেদ পারভেজ ইমন অন্যতম। সাতক্ষীরার মত জেলায় দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নেতৃত্বশূন্য থাকা খুবই দু:খ জনক। তিনি মনে করেন যারা সক্রিয় যাদের মধ্যে থেকে যোগ্যদের নেতৃত্বে দ্রুত সাতক্ষীরা কমিটি দেওয়া হোক। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু জেলা কমিটি নেই তা নয়, অনেক কলেজ ও উপজেলা কমিটিরও নাই। জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় সংগঠনটির কার্যক্রম স্থবির। তবে পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কিছু পৃথকভাবে কিছু কাজ করেছে। কিন্তু তাদের নেতা কে এটা তারা জানেনা বিধায় কার্যক্রম সেভাবে চলছে না। একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের জেলা কমিটি এতদিন ধরে থাকবে না এটা যথাযথ নয়। দ্রুত কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে সৎ নিষ্ঠাবান এবং অবিবাহিত ছাত্রদের দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে মঙ্গলবার দুপুরে কায়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।