সাতক্ষীরা

পানিতে ভাসছে প্রতাপনগর, কবর দেয়ার মত শুকনো মাটিও নেই!

By daily satkhira

August 21, 2020

এম. বেলাল হোসাইন: গতকাল রাতে চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম মারা গেছে। তার দাফনের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা ইউনিয়নের কোথায় না পেয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে খাজরা খেয়া ঘাটে আজ দাফন করেছি। প্রতাপনগর ইউনিয়নটি এখন পানিতে ভাসছে। এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে বুক সমান পানি উঠছে না। আমরা এখন কোথায় যাবো?

কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রতাপনগর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন। প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের পুত্র শাহীনুর রহমান, বৃদ্ধা আব্দুস সাত্তারসহ অনেকেই বলেন, বিগত ৪০ বছরে প্রতাপনগর ইউনিয়নের এভাবে তলিয়ে যেতে দেখিনি। এত পানি কোথা থেকে আসছে। তারা বলেন, প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে ইউনিয়নবাসীর দু:খ কষ্ট। বেলা ১১টার দিক থেকে শুরু হয় জোয়ার প্রবল বেগে হু হু করে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিকাল ৫টার পরে ভাটার টানে কিছুটা পানি সরে গেলেও বসবাসের মত পরিবেশ নেই। চারিদিকে পানি আর পানি। কষ্টের যেন শেষ নেই মানুষের।

সরেজমিন ঘুরে জানাগেছে, সুপার সাইক্লোন আম্ফান, বুলবুলসহ বড় বড় ঘুর্ণিঝড় প্রতাপনগর ইউনিয়ন এত ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। মাত্র দুইদিনের জলোচ্ছাসে ইউনিয়নের রিং বাধগুলো ভেঙে এ অবর্ণনীয় কষ্টের জোয়ারে ভাসছে তারা। ইউনিয়নের গড়ইমহল কালভার্ট সংলগ্ন প্রধান পিচ ঢালা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। কল্যাণপুর ক্লিনিক মোড় থেকে তালতলা বাজার পর্যন্ত সকল রাস্তা ছাঁপিয়ে জোয়ারের পানি সকল জায়গায় প্রবেশ করেছে। ফলে ইউনিয়ন সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জ্বলোচ্ছ্বাস ঘুর্ণিঝড় আম্পান প্লাবনে জোয়ার আজও ডুবে আছে কৃষকের সাধের সবুজ ফসল ভরা খেত খামার। স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, গবাদিপশু, খামারিদের সবই ভাসিয়ে দিয়ে নিঃশ্ব করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আম্পান! আজও জোয়ার ভাটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে ভুক্তভোগী প্লাবিত এ অঞ্চলের মানুষের। বাসগৃহ ভেঙ্গেছে শতশত পরিবারের। টোং বেঁধে বসবাস করছে শতশত পরিবার। আজও বাধ্য হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে অনেক পরিবারের। বিপন্ন দুর্বিষহ জীবন যাত্রার শেষ হবে কবে? একই অবস্থা আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা এবং দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের গাবুরাতেও।

উপায়ন্তর হয়ে তলপিতলপা গুছিয়ে এলাকা ছাড়ছেন অনেকেই। তবে যাদের যাওয়ার মত জায়গা নাই তারা পড়েছেন বিপাকে। সাইক্লোন শেল্টারগুলো কানাই কানাইপূর্ণ, উচুঁ জায়গাগুলো গরু ছাগল রেখে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা সেখানকার মানুষের। তবে রিং বাধ ভেঙে পুনরায় প্লাবিত হওয়ায় প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুষছেন ইউনিয়নের মানুষ। গত ২০ মে আম্ফানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকুলীয় অঞ্চল আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি বেড়ীবাধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয়ে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। অথচ আম্ফানের ৩ মাস অতিবাহিত হলেও সে সব স্থানে বেড়ী নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাধ দেওয়া হলেও গত দুই দিনের প্রবল বর্ষণে রিং বাধগুলো ভেঙে প্লাবিত হয় এসব এলাকা।

এবিষয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, আশাশুনির বানভাসী মানুষের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় ২৫ মে.টন চাউল বরাদ্দ দিয়েছেন। পানি বন্দী মানুষগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দ্রুত বেড়ী নির্মাণের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে। ইতোমধ্যে হাজরাখালীতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টির কারণে তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারা বলছেন নভেম্বর আগে আর সেখানে বাধ নির্মাণ সম্ভব না। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (১) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার বলেন, নি¤œচাপ এবং জোয়ারের প্রচন্ড থাকায় রিংবাধগুলো ভেঙে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমার দ্রুত পানি বন্দি মানুষগুলোকে রক্ষার জন্য আগামীকাল একটি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করবো।

২১.০৮.২০২০