জাতীয়

মা-মেয়েকে নির্যাতন : চেয়ারম্যানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

By Daily Satkhira

August 26, 2020

অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজারের বহুল আলোচিত মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় উপজেলার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে নির্যাতিত পারভিন বেগম বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার বাদি এ ঘটনায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের মারধরের অভিযোগ এনেছেন।

মামলায় আসামিদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম, উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)।

মামলার বাদি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন বেগম তার দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তারা সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তির হাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ওই ভাড়াবাসা থেকে গত ২১ আগস্ট দুপুরে পারভিন বেগম, তার ছেলে এমরান, ছেলের বন্ধু ছুট্টু এবং দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার হায়দার নাশি এলাকায় ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। তারা প্রথমে মাইক্রোবাসযোগে সাতকানিয়ার কেরানি হাটে আসেন। তারপর সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত বেবি টেক্সিতে করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারার পূর্ব পাশে হায়দারনাশিস্থ ছোট মেয়ের শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও রওনা দেন। তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেবি টেক্সিতে করে চকরিয়ার হারবাং লাল ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক তাদের ধাওয়া দিতে দেখেন। এতে চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহর চাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদের আটক করে কিল ঘুষি মারতে থাকে।

এসময় ওই অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে নেয়। এরপর তাদের কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় হাটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান। মামলার বাদি তার মামলায় আরও উল্লেখ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাদের অকথ্যভাষায় গালমন্দ করে প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারেন। এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পারভিন বেগম আরো জানান, গরু চুরির ঘটনা মিথ্যা ও অপবাদ। তাদের গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাটাইয়া সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন মানহানির অভিপ্রায়ে অপমান করার উদ্দেশ্যে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা করেছে।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশ গত ২৪ আগস্ট ভোর রাতে নাছির উদ্দিন(২৮), নজরুল ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেন। তাদের ওই দিনই চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেওয়া হলে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব শুনানি শেষে তাদের জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন; মামলা রুজু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। তিনি মা মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগিতা করেছেন।

পারিভিন বেগম ও তার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৫ আগস্ট বিকেলে চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলা বাদী পারভিন বেগমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি রুজু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন।