তালা

কপোতাক্ষ নদ থেকে অবাধে বালি উত্তোলন : হুমকির মুখে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ

By Daily Satkhira

May 08, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক  : কপোতাক্ষ নদ থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে বালি। দুইটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদ থেকে বালি উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ফুট দূরে। সম্প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করা হয়েছিলো বালি উত্তোলন। তবে প্রশাসন বন্ধ করার দুই দিন পরই আবারও শুরু হয়েছে উত্তোলন। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর এলাকায় এ বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রকাশ দালাল-এর তত্বাবধায়নে এ বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের ছয় মাস পানির সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় তাদের। এজন্য নদ খনন করে তীরে দেওয়া হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। কিন্তু বালি উত্তোলনের কারণে যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ভেড়িবাঁধ।

শনিবার (৬এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে গঙ্গারামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের ভেতরে দুইটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। দুইটি ড্রেজারে সাত জন শ্রমিক কাজ করছে। একটি ড্রেজিং মেশিনের বালি নির্মাণাধীন গঙ্গারামপুর সাইকোন শ্লেটারে কাজে লাগানো হচ্ছে। আরেকটি ড্রেজিং মেশিনের বালি প্রায় দুই হাজার ৭০০ ফুট দূরের একটি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এ-বালি ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ঢালী কন্সট্রাকশন সাইকোন শ্লেটারে নিচ্ছেন। আর স্থানীয় শামিম গাজী নামে এক ব্যক্তি বালি নিয়ে ভরাট করছেন নিজের জমি। স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রকাশ দালাল বালি উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করছেন বলে স্থানীয়রা জানান। ড্রেজিং মেশিনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম জানান, ড্রেজিং মেশিনের মালিক পলাশের সাথে চুক্তি করে তিনি ওই কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে ড্রেজিং মেশিনের মালিক ঈদ্রীসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। ইউপি সদস্যের পক্ষে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা শ্যামল মন্ডল জানান, বালি উত্তোলনের জন্য কাগজে কোন অনুমতি নেই। ড্রেজিং মেশিন মালিকের এক ফুট বালির জন্য দিতে হয় সাড়ে চার টাকা ও প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করতে (এক ফুট বালি) দিতে হয় দুই টাকা। সব মিলিয়ে এক ফুট বালি উত্তোলন করতে সাড়ে ছয় টাকা খরচ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শামিম গাজীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, দরজার কারখানা করার জন্য নিজের জমি ভরাট করছি। ইউপি সদস্য প্রকাশ দালাল-এর কাছে থেকে সাড়ে ছয় টাকা করে বালি ক্রয় করেছি। বালি উত্তোলনের জন্য তিনি প্রকাশ দালাল-এর কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছেন। এখনও আমাকে ওই টাকার বালি দেয়নি। ইউপি সদস্য প্রকাশ দালাল জানান, প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন নেই। এলাকার উন্নতির স্বার্থে এ কাজ করা হচ্ছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের যেন ক্ষতি না হয় সেভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। মেশিনে বালি উত্তোলন করতে গেলে শ্রমিকদের টাকা ও তেলের টাকা দিতে হয়। এজন্য টাকা নিয়ে ছিলাম। তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটন আলী জানান, কিছু দিন আগে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে সব কিছু নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে কি হয়েছে, সে বিষয়টি তার জানা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের দায়িত্বে থাকা সাইদুর রহমান জানান, তাদের মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তারা যদি না মানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। বালি উত্তোলনের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে কেউ বালি উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রবীর গোস্বামী জানান, কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি উত্তোলন সম্পূর্ন অবৈধ। কেউ বালি উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।