আমার রবীন্দ্রনাথ
এই যে বসে আছি অকালের কালে মহাদুর্দিনে প্রতি দিন কেউ না কেউ হারাচ্ছে প্রিয়জন, ভাবছে তবে কি কোন সুখের দিন নেই দুঃখ কষ্টের মাঝে নেই কোন আনন্দের ছটা? কবি গুরু যেন কবিতার পাতায় ভর করে সম্মুখে আসলেন, বললেন যেন- ” আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দগন লাগে তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। ” এই লাইনগুলো পড়েই মনের মধ্যে কী এক সান্তনার পরশ পাই, খুঁজে পাই মনের শান্তি। এযেন শান্তি নিকেতনে কবি গুরুর নিজেরই বানী- ” তিনি আমার প্রাণের আরাম মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি ” …. কখন কীভাবে যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে গেছে নিজেদেরই অজান্তে গানে কবিতায়, ছন্দে-আনন্দে, সুখে-বিরহে ছায়া হয়ে মায়া হয়ে কায়াহীন রবীন্দ্রনাথ আছে জড়িয়ে।
মনে পড়ে সেই ছােট্ট বেলায় স্কুলের সমাবেশে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে গাওয়া প্রাণ ছোঁয়া জাতীয় সংগীত- ‘ আমার সােনার বাংলা, আমি তােমায় ভালবাসি ‘ অর্থ বুঝে গেয়েছি কজন? কিন্তু ভালবাসা ঠিকই ছিল শতভাগ। এখানেই সফল ভালােবাসার রবীন্দ্রনাথ। জীবনের যৌবনে কত রঙ এসেছে রাঙাতে ফাগুনের শিমুল বন রাঙাতে চেয়েছে এই মন কিন্তু মনের আর্গল ভেঙ্গে আসেনি কোন ভাষা কবিগুরু তুমিই এসেছে কচি প্রাণে ভালােবাসা নিয়ে মনের অন্দরে বলেছে যেন- ” আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ চুনি উঠলাে রাঙা হয়ে। আমি চোখ মেললুম আকাশে- জ্বলে উঠলাে আলাে পুবে-পশ্চিমে। গােলাপের দিকে চেয়ে বললুম “সুন্দর — সুন্দর হল সে ”।
কর্মজীবনে শত ব্যথ্যা, ব্যর্থতার ঘনঘটা কে যে বন্ধু, কে শত্ৰু কিছুই যায় না বােঝা মাঝে মাঝে কী এক ক্লান্তি করে ভর। মন চলে যেতে চায় কোন সুদূরে কিন্তু থেমে যায়নি তারই কথায়-
” ঘদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সংগীত গেছে ইংগিতে থামিয়া, যদিও সংগী নাহি অনন্ত অম্বরে, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া, মহা আশংকা জপিছে মৌন মন্তরে, দিক্ দিগন্ত অবগুণ্ঠণে ঢাকা- তবু বিহঙ্গ, ওরে, বিহঙ্গ মাের, এখনি, অন্ধ, বন্ধ করাে না পাখা ”।
হতাশায় পাখা না থামালেও জীবনের গতি কমায়ে এই পাখা থামায়ে চলে যেতে হবে একদিন। শূন্য খেয়া ঘাটে কোন তরণী আমার জন্য প্রতীক্ষায় থাকবে কি? হয়তো থাকবে, হয়তো না। আমি শুধু জানি—
” মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে জীবন্ত হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।”
লেখক: শেখ মফিজুর রহমান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা।