ডেস্ক রিপোর্ট : জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সাতক্ষীরা পৌর মেয়রের নাগরিক আন্দোলন মঞ্চবিরোধী নজিরবিহীন কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। রবিবার সকাল ১১ টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্ল্যাহ, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম(বার), সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদসহ জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রধানরা অংশ নেন। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে সাতক্ষীরায় যে নাগরিক সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার ঘাটতি রয়েছ। তারা পৌর কর্মচারীদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করানোর নামে রাস্তায় নামানোর তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, এ ধরনের কাজ সাতক্ষীরা পৌর মেয়র কোনভাবেই করতে পারেন না। একই সাথে সাতক্ষীরা প্রাণসায়র খাল পুন:খননের প্রশ্নে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির ভূমিকার সমালোচনা করা হয়। সভার সভাপতি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে বাধা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করা হবে। সভায় জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের জনগণের নিকট কমিটমেন্ট রয়েছে। জনগণকে সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় বসবাস করলেও এখানকার নাগরিকদের অনেক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না। অপ্রতুল নাগরিক সেবা নিয়ে নাগরিকদের অসন্তোষ রয়েছে। নাগরিকদের বিভিন্ন সংগঠন এগুলো নিয়ে কথা বলবে, প্রতিবাদ করবে, দাবি জানাবে- এটাই স্বাভাবিক। পৌর মেয়রের যদি এসবে কোনো আপত্তি থাকে তাহলে তিনি বিবৃতি দিয়ে বা সংবাদ সম্মেলন করে তার বক্তব্য পরিষ্কার করতে পারতেন। তা না করে একটি সংগঠন, বিশেষ করে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেভাবে তিনি লোকজন নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এবং আপত্তিকর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তা শোভন হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। এভাবে নাগরিকদের সংগঠন বা নাগরিক নেতৃবৃন্দকে প্রতিপক্ষ বানানো তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। এছাড়াও সভায় জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ ও মাদক নির্মূল করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগের দাবিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধারাবাহিক পথসভা করার পর গত ৬ সেপ্টম্বর বিছানা-বালিশসহ সাতক্ষীরা পৌর সভায় ঘেরাও করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাতক্ষীরার নাগরিক অধিকার আদায়ের আপোষহীন গণসংগঠন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরা। কয়েক শত নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অভিনব এ কর্মসূচিকে স্বাগত জানায় জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত সাতক্ষীরার হাজার হাজার মানুষ। সেদিনের সেই কর্মসূচি থেকে নাগরিক নেতৃবৃন্দ বারবার পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের নাগরিকদের সামনে এসে মাইকে জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানানোর জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু পৌরসভার কোন জনপ্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হননি। এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘন্টা সেখানে অবস্থান করার পর নাগরিকরা তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি তার কাউন্সিলর ও পৌর কর্মচারীদের নিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর এক নজিরবিহীন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। একদিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সরকারের ভাতাভোগীদের জড়ো করে নিয়ে আসা হয়, অন্যদিকে ব্রাকের সমিতির সভার নাম করেও অনেক নারী-পুরুষকে সেখানে আনা হয়। যাদের অধিকাংশই জানতেন না তাদেরকে আসলে কি কাজে সেখানে আনা হয়েছে! কর্মসূচির ব্যানারে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদকের নাম দিয়ে বক্তারা তাদের বক্তব্যে কুরূচিপূর্ণ এবং অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় নাগরিক নেতৃবৃন্দের চরিত্রহনন করে এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বক্তব্য রাখেন। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌর মেয়রের এহেন কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেন সাতক্ষীরার আপামর জনগণ।