ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে। রবিবার (৭ মে) দলটির সংসদীয় দলের সভায় বসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় এমপিদের প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা দেন তিনি। মূলত এ কারণেই তাদের ভেতরে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই সতর্কতায় উজ্জীবিত, তাদের মধ্যে বরং দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন এমন দশ জন সংসদ সদস্য তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এমপি হিসেবে তৃণমূলে জনপ্রিয় হওয়া খুবই কঠিন। কারণ এমপিদের কাছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাওয়া-পাওয়ার কোনও সীমা নেই। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা অসীম নয়, তাই সব চাওয়া পূরণ করা সম্ভব হয় না। সংসদ সদস্যদের জনপ্রিয় হওয়া অনেক কঠিন। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের কাছে জনপ্রিয়তাই যদি একমাত্র মানদণ্ড হয়, তাহলে একজন এমপিও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি জনপ্রিয়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দুই এমপি বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাদের কাছে শতভাগ জনপ্রিয় হওয়া কষ্টসাধ্য। তাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে। তা পূর্ণ করতে না পারলে সৎ থেকেও তৃণমূলে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় না।’ দলটির তৃণমূলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতির সংসদীয় দলের সভায় এমপিদের দেওয়া সতর্কবার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন তারা। জেলা পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় দেওয়া তো দূরে থাক, অনেক সংসদ সদস্য আছেন ঢাকা ছেড়ে এলাকায় আসেননি গত তিন বছর। দলের নেতাকর্মীদের জেলে বন্দি হওয়ার পেছনেও অনেক এমপির ষড়যন্ত্র আছে। অন্তত ৩০টি জেলায় পাওয়া যাবে এমন নজির।’
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দলীয় সভাপতি মাঈনুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘অনেক জেলায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের দূরত্বের খবর পাওয়া যায়। এটি দলের জন্য নেতিবাচক। নির্বাচনের আগে এমপিদের প্রতি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সতর্কবার্তা তৃণমূলকে সত্যিই উজ্জীবীত করেছে।তার হুঁশিয়ারি দলকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন থাকায় সবস্তরে দেখা দিয়েছে মানসিক দূরত্ব। এ কারণে মূলত সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দল। সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা তৃণমূলকে একদিক দিয়ে শক্তিশালী করেছে।’
সংসদ সদস্যদের প্রতি তার হুঁশিয়ারি বার্তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শেরপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। এই দুই নেতার আশা, তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনার সতর্কবার্তা নেতাকর্মীদের ভেতরে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে।
বৈঠকে এমপিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কোনও এমপিকে বিজয়ী করে আনার দায়িত্ব আমি নেবো না। ‘আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু আগামী নির্বাচনে আপনাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে। এবার আমি কারও দায়িত্ব নিতে পারবো না। যেই হোন না কেন, জনপ্রিয়তা না থাকলে মনোনয়ন দেবো না। আপনারা কে কী করছেন, প্রত্যেকের খতিয়ান আছে আমার কাছে। ছয় মাস পরপর তথ্য নিই। যার অবস্থা ভালো তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রায় সব এমপিকেই ফেলেছে দুশ্চিন্তায়। এ প্রসঙ্গে আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘সংসদীয় দলের সভায় এমপিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে যার যার কর্মফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এতে তার কিছু করার নেই। যে জনপ্রিয় সে মনোনয়ন পাবে। দলীয় সভাপতির বক্তব্য অনেকের ভেতরে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। তবে এটাও সত্যি যে, ভালো কাজ করে থাকলে চিন্তামুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি মানুষের জন্য, তাই মানুষের সংস্পর্শে যেসব এমপি আছেন তারাই আবারও মনোনয়ন পাবেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলে জনপ্রিয়তাকে ধরা হবে অন্যতম মাপকাঠি। এটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তার সাফ কথা, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না আগামী নির্বাচনে। এই হুঁশিয়ারি অনেক এমপির মধ্যে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, ভালো লেখাপড়া করলেই কেবল ভালো ফল পাওয়া যায়। তেমনই ভালো কাজ করলে ভালো পুরস্কারও নিশ্চয়ই দেবেন শেখ হাসিনা।’
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের কী করলে মনোনয়ন পাবে আর কী করলে মনোনয়ন পাবে না, সেই প্রসঙ্গে কিছু বার্তা দিয়েছেন। শীর্ষ পর্যায় থেকে সতর্কতা অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কাজ দেখিয়ে তাদের অবস্থান সুসংহত করার সময় এখনও আছে।’