জাতীয়

ধর্ষণ মামলা: ‘আত্মগোপনে’ সাফাত, বাসায় একাধিকবার অভিযান

By Daily Satkhira

May 10, 2017

রাজধানীর বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদকে গ্রেপ্তারে তাদের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে একাধিকবার সেখানে গিয়েও তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি।

সাফাত বাসায় আছেন বলে তার বাবা দিলদার আহমেদ দাবি করে এলেও তিনি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলে পুলিশের অভিযোগ।

বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, “সাফাতের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তার বাবা মিথ্যা বলেছেন। উনি হয়তো ভেবেছেন, পুলিশ তদন্তে কোনো প্রমাণ পায়নি বলে তাকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি। সে বাসায় আছে বললে হয়তো তাকে সবাই নির্দোষ ভাববে বলে ভেবেছেন।”

বনানী থানা পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার দুপুরে আগে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৬২ নম্বর রোডে সাফাতের বাড়িতে যান। বেলা ১টার পর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাফাতকে তারা পাননি।

সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ বলেন, “পুলিশ প্রতিদিনই আমার বাসায় অভিযান চালাচ্ছে। সাফাতকে তারা খুঁজছে। সে কোথায় আছে তা বলতে পারছি না, কারণ সে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছে না।”

সোমবার রাতে সাফাতের বাবা জানিয়েছিলেন, ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সাফাত গুলশানের বাসাতেই ছিলেন। ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে এই স্বর্ণব্যাবসায়ী বলছেন, সাফাতকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করা হচ্ছে।

এদিকে সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামির একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি। শাফাত ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী (অজ্ঞাতনামা)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, বনানী থানা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যেন দেশের বাইরে না যান, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা দেশে আছেন। তারা ছায়া তদন্ত করছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে।

বনানী থানার পরিদর্শক আব্দুল মতিন বলেন, “আমি পাঁচ থেকে ছয়বার সাফাতের বাসায় গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। সাফাত বাসায় নেই, সে কোথাও পালিয়ে আছে, তাকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সোমবার বলেছিলেন, অপরাধীরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। আসামিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার শাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ বলেন, ২৮ মার্চ রাতে ছেলে জন্মদিনের পার্টি করতে বাইরে গিয়েছিলেন, এ কথা সত্য। বিপদে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় তিনি ছেলের সঙ্গে দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকেও দিয়ে দিয়েছিলেন। গাড়িচালক বিল্লালও সঙ্গে ছিলেন। তবে তার ছেলে ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত নন। পুলিশ তদন্তে গ্রেপ্তার করার মতো তথ্য-প্রমাণ পাচ্ছে না বলেই ছেলেকে ধরেনি বলে তিনি দাবি করেন।

দিলদার আহমেদ অলংকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের মালিক। তার বড় ছেলে শাফাত আহমেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পাস করে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন সম্প্রতি। তিনি জানান, পুলিশ গুলশানে তাদের বাসায় গিয়েছিল। নানা বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে শাফাত আহমেদের সঙ্গে কথা বলেনি।

শাফাত কোথায় জানতে চাইলে দিলদার বলেন, ছেলে বাড়িতেই আছেন। ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পরও ছেলেকে ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করছে। প্রমাণ না পেলে কীভাবে ধরবে?’ তিনি বলছেন, শাফাত আহমেদ নির্দোষ। শাফাতের সাবেক স্ত্রী তাকে ফাঁসাতে জন্মদিনের পার্টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পাঠিয়েছিলেন। শাফাত বাবা-মাকে না জানিয়ে বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন। দুই মাস আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করা এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন দিলদার আহমেদ।

মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান সাকিফও দেশে আছেন। তার বাবা মোহাম্মদ হোসেন জনি বলেন, ছেলে কোথায় আছেন তা তিনি জানেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, শাফাত গুলশানে তাদের বাড়ির উল্টো দিকে থাকে। ঘটনার দিন বিদেশে একটি আইটি ফেয়ারে অংশ নিয়ে সাদমান দেশে ফেরেন। পরে শাফাতের অনুরোধে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নির্যাতনের শিকার অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার ছেলের বন্ধুত্ব দুই বছরের পুরোনো। সাদমানের মাধ্যমেই শাফাতের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়।

তবে সাদমানের বাবা বলছেন, ঘটনার সময় তার ছেলে বনানীর হোটেল রেইন ট্রিতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বাসায় ফিরে এসেছিলেন। ছেলে ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পরও তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসেন জনি বলেন, তার ছেলে ‘একটু’ ভয় পেয়েছেন। আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।

সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের ব্যবস্থাপক। তার বাবা মোহাম্মদ হোসেন জনি ওই গ্রুপের মালিক। রেগনাম গ্রুপের সিএনজি কনভারসন, টাইলস, আবাসন প্রতিষ্ঠান, কফি শপ ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে।

ধর্ষণ মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ই–মেকার্স নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম চালান। তার মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে। গায়ক অরিজিৎ সিংকে ঢাকায় নিয়ে এসে কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন তিনি। ফেসবুকে ই–মেকার্সের ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নাঈম আশরাফের ছবি দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ঢাকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী গত ২৮ মার্চ রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বলে ৬ মে তাদের একজন বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটে যাওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর তারা মামলা করেছেন অনেকটা বাধ্য হয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পরিচিত বন্ধুবান্ধব তাদের বলেছিলেন, ২৮ মার্চ রেইনট্রিতে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তারা শুনতে পাচ্ছেন। তারপর তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন।

মামলার বাদী বলেন, ওই রাতে শাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের দুই বন্ধুকে শাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করেন শাফাতের গাড়িচালক। তারা আশঙ্কা করছেন, ওই ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে মুখ না খুললেও আরও বেশি হয়রানির ভয়ে তারা থানায় যান।