অনলাইন ডেস্ক : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের সরকারি ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান (মিলন)। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লকডাউনে প্রধানমন্ত্রীর আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া অনুদানে বড় ধরনের অনিয়ম, ত্রাণের চাল ও অর্থ লুটপাট, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অবৈধ অর্থ আদায়, ভিজিডি কার্ডধারীদের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে করেছেন মিলন। চেয়ারম্যান জাকিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিলন এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- এলজিএসপি, কাবিখা, কাবিটা, জলবায়ু ট্রাস্টসহ নানারকম প্রকল্প থেকে এই ৯ বছরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী করোনকালীন যে সাহায্য দিয়েছেন সেই সাহায্যের অর্থ গরিব-দুঃখীদের মাঝে যথাযথ বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেছেন। আম্পানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শত শত মেট্রিক টন চাল, লাখ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন প্রকার জিনিসপত্র দিয়েছেন। সেই চাল ও টাকার সিংহভাগ অর্থ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন আত্মসাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার ২৫০০ টাকা দিয়েছেন তা অধিকাংশ গরিবরা পাননি। এমনকি মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে সেই টাকা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা আত্মসাৎ করেছেন। মিলন বলেন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার ২০১৬ অর্থবছরের নতুন বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ৭ লক্ষাধিক টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। আনুমানিক ৩৫৭টি ভিজিডি কার্ডধারীর কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫০ টাকা করে উত্তোলন করে ব্যাংক একাউন্টে সেই টাকা জমা না দিয়ে নিজে প্রতিমাসে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মেরে খেয়েছেন। চাল নেওয়ার খরচের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা করে উঠান অথচ খরচ সরকারি অফিস থেকেই বহন করা হয়। মিলনের অভিযোগ, চেয়ারম্যান জাকির নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৩টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন যার একটা হলো ডিগ্রি সমমানের। অথচ তিনি নিজে এসএসসি পাস। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ৯ বছরে কয়েক কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। ২টি অস্ত্রের মধ্যে একটি পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য ৯ লাখ টাকার যে আয়কর সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন সেটি ভুয়া ও জাল। ৩নং ওয়ার্ডের (কুড়িকাহুনিয়া, শ্রীপুর) চৌকিদার ইব্রাহীম গাজীর ভাই মুকুল গাজী ও তার অন্যান্য লোকজনের মাধ্যমে বিদ্যুতের মিটার দেয়ার নামে ২৩০০ টাকা করে নিয়ে ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন। অথচ যা প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। জাকিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ত্রাণ লুটকারী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আবেদন জানানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মিডিয়ার সামনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও অদ্যাবধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জাকিরের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে প্রতাপনগরে তার প্রায় কোটি টাকার এসি বাড়ি, খুলনায় সেন্ট্রাল রোডে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, যার হোল্ডিং নং- ৮, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের পেছনে স্ত্রীর নামে অর্ধকোটি টাকার জমি, খুলনার কয়রায় শ্বশুরবাড়ি এলাকায় মেয়ে ও স্ত্রীর নামে জমি, প্রতাপনগর (ধামরাইট) কল্যাণপুর গ্রামে মাছের ঘের, ২তলা বিল্ডিং, চাকলা, পূর্ব নাকনা ও মাদারবাড়ীয়ায় শত শত বিঘা মাছের ঘের আছে। ২টি প্রাইভেট গাড়ি, ২টি মটর সাইকেল সহ নামে বেনামে ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা আছে। যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী, সচিবসহ প্রশাসনের সকলের কাছে বানভাসী ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে আকুল আবেদন যাতে উক্ত ত্রাণ আত্মসাৎকারী, সরকারি সম্পদ লুটকারী, চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের হাত থেকে আমরা ইউনিয়নবাসী পরিত্রাণ পাই এবং তার দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন হয় তার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সময় চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি অন্য কেউ রিসিভ করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব এখন ব্যস্ত আছেন। পরে কথা বলবেন।’