দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দেশটির উদারপন্থী রাজনীতিবিদ মুন জা-ইন। উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে মুক্ত মনোভাবের ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেতা দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার (৯ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেসরকারিভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। এ খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে ৪১.০৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মুন জা-ইন। তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট এক কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার ৮শ ভোটার। মুনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিবার্টি কোরিয়া পার্টির হং জুন-পিয়ো পেয়েছেন ২৫.৫ শতাংশ ভোট। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার আগেই বুথফেরত জরিপে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, মুন-ই হতে যাচ্ছেন জিউন-হাইয়ের উত্তরসূরী। ভোট গণনার সময় ডেমোক্রেটিক দলের এই প্রার্থী অবস্থান নিয়েছিলেন রাজধানী সিউলের গুয়ানঘুয়ামুন স্কয়ারে। সেখানে তিনি সমর্থকদের বলেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সব মানুষের প্রেসিডেন্ট হতে চান। নিজের বিজয় নিশ্চিত হয়ে উঠলে তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেকেই সমর্থন জানিয়ে আসছেন এবং আমার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। তারা চান এমন একটি ন্যয়সঙ্গত ও একতাবদ্ধ দেশ গড়তে, যে দেশটিতে নীতি ও সাধারণ জ্ঞানের মূল্য রয়েছে। তাদের জন্য এটি একটি বড় বিজয়।’ ধারণা করা হচ্ছে, ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এই মানবাধিকারকর্মী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করলে উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি বদলাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার আগের সরকারগুলো উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে কঠোর মনোভাব দেখালেও মুন জা-ইন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে। মুন এমন একটি সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন যখন একদিকে দক্ষিণ কোরিয়া আর্থিক সংকট মোকাবিলা করছে, অন্যদিকে কোরিয়া উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া কার্যত যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ৬৫ বছর বয়সী পার্ক জিউন-হাই। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। পার্কের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, নিজ ক্ষমতার অধীনে তিনি তার বন্ধুকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেন। পার্ক গিউন-হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ৬৫.৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাইয়ের মতো কোম্পানিও রয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে পার্কের। এই অভিযোগেই গত ১০ মার্চ পার্লামেন্টে অভিশংসিত হন পার্ক। তখনই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৩০ মার্চ আদালতের আদেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ এপ্রিল সাংবিধানিক আদালতে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন পার্ক।