কালিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউিনয়নের কাঁকশিয়ালী শ্মশানঘাট এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যাগের মধ্যে পাওয়া নবজাতককে দত্তক নিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৯ জন আবেদন করেন। কে হবেন ওই দত্তক দম্পত্তি তা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পাঁচ সদস্যের শিশু কল্যাণ বোর্ড পর্যালোচনা সাপেক্ষে তালিকা প্রস্তুত করে সাতক্ষীরা সদর সহকারি জর্জ আদালতে (শিশু আদালত) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যা ৬টায় দিকে উপজেলার কাঁকশিয়ালী নদীর তীরে কাঁকশিয়ালী শ্মশানঘাট এলাকার পাঁকা সড়কের উপর থেকে বাজারের ব্যাগে পথচারী ইসরাইল গাজী, আব্দুস সত্তার ও পঞ্চানন মন্ডল সদ্য জন্ম নেওয়া এক নবজাতককে উদ্ধার করে। এ সময় তারা নবজাতকে স্থানীয় সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন নবজাতক শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করে। নবজাতক পুরুষ শিশুটি সুশ্রী হওয়ায় তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে থাকে। কৌতুহলী মানুষ ইতিমধ্যে তার নাম রাখে মহারাজ। এরই মধ্যে ওই শিশুটিকে হিসাবে পাওয়ার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯ জন মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আবেদন করেন। সকাল ১১টায় এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে ৬ সদস্যের শিশু কল্যাণ বোর্ড গঠণ করা হয়। বোর্ডের সভাপতি হলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল, সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণা চক্রবর্তী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোয়াজ আবরার ও থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন। দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে শিশু কল্যাণ বোর্ড থেকে যে সকল শর্ত নির্ধারণ করেছে সেগুলো হলো, (১) দত্তক গ্রহীতাকে ওই শিশুর নামে ৩০ লাখ টাকার এফডিআর করতে হবে। (২) পৌরসভার বাইরে হলে কৃষি জমি ৫০ শতক ও পৌরসভার মধ্যে হলে ১০ শতক জমি তার নামে লিখে দিতে হবে। (৩) কমপক্ষে অনার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করাতে হবে। (৪) জটিল রোগের ক্ষেত্রে সকল ধরণের চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।(৫) তার সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। (৬) যে দত্তক নেবে সে আর কাউকে দত্তক নিতে পারবে না। (৭) যদি উক্ত দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদ বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয় মিলে তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে হবে। (৮) সর্বোপরি শিশু কল্যাণ বোর্ড যে কোন শর্ত আরোপ করতে পারবে। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সচিব বলেন, যে সকল আবেদনকারীর বয়স ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকবে তাদের জন্য বোর্ড সুপারিশ করবে। আদালতের আইনি প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত হলে শিশু কল্যাণ বোর্ড দত্তক প্রদানের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বর্তমানে নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমান দেখভাল করছেন।