অর্থনীতি

সমন্বয়হীনতায় নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজারদর : জনজীবনে নাভিঃশ্বাস

By Daily Satkhira

October 20, 2020

অনলাইন ডেস্ক : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আটা-চালের বাজার দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এ কাজ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আমাদের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের সংস্থা নেই। এ ধরনের সংস্থা আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। আবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত চিঠি দিয়ে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের অনুরোধ জানানো হলেও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দর নির্ধারণ করে দেওয়ার এখতিয়ার বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদফতরের। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাটি সে কাজ করে দিলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখার ক্ষমতা নেই তাদের।

‘এখতিয়ার’-এর চক্রে পড়ে দ্রব্যমূল্যের ঘুড়ি উঠছে তো উঠছেই। মওকা বুঝে ব্যবসায়ীরা চাল, তেল, আটা, পেঁয়াজ, ডিম, সবজির দাম তো বাড়িয়েছেনই, ছাড় দেননি শিশুদের গুঁড়োদুধেও। চাল, আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু কোথাও সেই দামে পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে না।

সরকারের ঠিক করা দাম আমলেই নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করছেন খেয়ালখুশি মতো। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও লাভ হচ্ছে না। একদিকে করোনার থাবায় আয় কমেছে মানুষের। বেড়েছে বেকার। বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিলো দ্রব্যমূল্য।

সরকার মিলগেটসহ পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দর ঠিক করে দিয়েছে। অকারণে বেড়ে যাওয়া আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সেটার দরও ঠিক করা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে খোলা ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণেও টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেয়াঁজের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। আলু এখনও ৫০-৫৫ টাকা। ভালো মানের মিনিকেট চাল ৬০-৬২, মাঝারি মানের মিনিকেট ৫০-৫২ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা লিটারে। গুঁড়োদুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা। ৮০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া মুশকিল। কাঁচামরিচের কেজি এখনও ২৫০-৩০০ টাকা। কেজিতে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।

বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার? জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় বা কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মিলগেটে চালের দর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখার এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত চিঠি আমি নিজে বাণিজ্য সচিব মহোদয়ের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। বাকি কাজ তাদের।’

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘চালের বাজার দেখার দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের, আমাদের নয়। পেঁয়াজ লবণের দায়িত্ব আমাদের। এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। যখনই কোনও পণ্যের দাম নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী টিসিবির ট্রাক সেলে স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছি। বিক্রি হচ্ছে তেল চিনিও। টিসিবির মাধ্যমে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।’

কৃষি সচিব মোহম্মদ নাসিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদফতর চালের পাইকারি ও খুচরা দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। দর বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের নয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকেজি উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের মিনিকেট চাল ৪৫ টাকা দরে ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আব্দুল গনি রোডস্থ খাদ্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দেশের চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে চালের দর নির্ধারণের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহম্মদ ইউসুফ জানিয়েছেন, ‘মিলগেটে নির্ধারিত দরের অতিরিক্ত প্রতিকেজিতে ২ টাকা বাড়িয়ে পাইকারি পর্যায়ে এবং পাইকারি পর্যায় থেকে প্রতিকেজিতে আড়াই টাকা বাড়িয়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য দর নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করবেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করবেন ৫৬ টাকায়। একইভাবে মাঝারিমানের মিনিকেটের পাইকারি দাম হবে ৪৭ টাকা ও খুচরা ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা।’

গত ৭ অক্টোবর ভোক্তা, আড়ত ও কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে আলুর সর্বোচ্চ দাম বেঁধে কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এক সপ্তাহ পর গতকাল বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়।

কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে জেলা প্রশাসকদের ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩ টাকা এবং আড়তে ২৫ টাকা কেজিতে আলু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়।