নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলে আটক মিলনের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে কয়েকদিন আগেও অনুরোধ করেছিলেন খোদ সাংসদ নিজেই। এ কারণে সাংসদপুত্র রুমনও যান জেলগেটে। লাভ হয়নি। মিলন পালের কাছ থেকে কাগজে সই করার জন্য তার হাত টেনে ধরে চাপাচাপিও করেন তিনি। কিন্তু পারেন নি। অবশেষে অন্য এক ব্যক্তিকে কারা গেটে পাঠিয়ে সেই একই চেষ্টা করে এবারও ব্যর্থ হয়েছেন। আর কারারক্ষীরা ওই ব্যক্তিকে চ্যাংদোলা করে ধরে এনে স্ট্যাম্পটি জব্দ করেছেন। সাতক্ষীরা জেলা কারাফটকে এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল ঈদের দিন মঙ্গলবার। আর এতে করে প্রশ্ন উঠেছেÑ সাতক্ষীরা কি তবে এখন মগের মুল্লুক হয়ে গেল? একজনের বাড়ির তালা ভেঙে জিনিসপত্র নিয়ে আসছেন। ইচ্ছেখুশি যাকে-তাকে তুলে নিয়ে এসে মারছেন-পিটাচ্ছেন, বেসামালভাবে গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন, সাংসদের নিজের নামে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে যেখানে সেখানে রাত কাটান তার পুত্র। এতকিছুর পরও রুমনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না। জনমনে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে আইনের শাসন সাতক্ষীরায় কার্যকর আছে কিনা তা নিয়ে। যদি থেকে থাকে তাহলে সাংসদপুত্র কি আউনের উর্ধ্বে? নির্ভরযোগ্যসূত্র জানিয়েছে, সাতক্ষীরার নারী সাংসদ মিসেস রিফাত আমিনের পুত্র রাশেদ সরোয়ার রুমনের অজ্ঞাতনামা সহযোগী সোনা চোরাচালান মামলায় সাতক্ষীরা কারাগারে আটক মিলন পালের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে তার কাছে ২৫০ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্প ধরে তাতে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসতেই তা কেড়ে নেন কারারক্ষীরা। জব্দ করেন স্ট্যাম্পটি। অজ্ঞাত ওই যুবককে জেল গেট থেকে দ্রুত সরিয়ে দেন তারা। সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান ‘কয়েকদিন আগে নারী সাংসদ মিসেস
রিফাত আমিন টেলিফোনে তাকে অনুরোধ করেছিলেন স্ট্যাম্পে মিলনের সই করিয়ে দিতে। এজন্য স্ট্যাম্পসহ পুত্র রুমনকেও পাঠিয়েছিলেন’। তিনি বলেন ‘এটা আইনসিদ্ধ নয়। কেবলমাত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সংশ্লিষ্ট কোনো আদালতের নির্দেশনা ছাড়া সই করানো বেআইনি, কারাবিধির লংঘন’। তিনি জানান ‘আমি রুমনকে ফেরত পাঠিয়েছিলাম’। এদিকে ঈদে জেল সুপারসহ কয়েকজন ছুটিতে যাওয়ায় সাতক্ষীরা কারাগারে জনবল কম রয়েছে। এই সুযোগে মঙ্গলবার মিলন পালের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে পাঠানো হয়েছিল রুমনঘনিষ্ঠ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে। কিন্তু কারারক্ষীদের কড়া নজরদারিতে শেষ পর্যন্ত স্ট্যাম্পটিও খোয়া গেল। সাতক্ষীরার মিলন জুয়েলার্সের মালিক মিলন পাল সোনা চোরাচালান মামলায় গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে আটক রয়েছেন। মিলন পরিবারের দাবি, মিলন জেলে রয়েছে এই সুযোগে তাদের শহরতলির মাগুরা গ্রামের বাগানবাড়ির সম্পদ লুটপাট শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে রুমন বাগানবাড়ির খামারের ১৩ টি নেপালি জাতের মূল্যবান গরু ধরে নিয়ে গেছেন। ঈদ উপলক্ষে এর দুটি নিজেদের জন্য রেখে বাকি ১১ টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদের দিন সকালে রুমন ও তার মা নারী সাংসদ রিফাত আমিনসহ বেশ কয়েকজন মিলন পালের বাগান বাড়িতে যেয়ে গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাদের রেখে যাওয়া পিস্তল, গুলি ও গরু বিক্রির টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন। একই দিনে ফের এসে রুমনের কথিত স্ত্রী বেলী পুলিশের উপস্থিতিতে মিলনের এলিয়ান মডেলের প্রাইভেটের গ্লাস ভেঙে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে গেছেন। মিলনের বাবা দেবদাস পাল বলেন, মিলনকে মুক্ত করানোর নামে রুমন তার মার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এরপর আরও দশ লাখ টাকা না হলে এলিয়ান প্রাইভেট কারটি চেয়েছেন। শম্পা বলেন ‘তারা এখন নতুন ফন্দিতে জেলে থাকা আমার স্বামীর সই স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এ কারণেই জেল থেকে সই আনার চেষ্টা করেছেন তারা’। এর আগে সাংসদ মিসেস রিফাত আমিন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মিলন তার গাড়িটি আমার ছেলে রুমনের নামে লিখে দিয়ে গেছেন। তাছাড়া ওর বাগানবাড়িতে থাকবার লিখিত অনুমতিও দিয়েছেন তিনি’। তিনি বলেন মিলন ও রুমন যৌথভাবে বাগানবাড়িতে গরুর খামার বাবস্থাপনা চালিয়ে আসছে। তবে সাংসদের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে মিলনের স্ত্রী শম্পা রানী পাল বলেন ‘আমার স্বামী রুমনের নামে গাড়ি বাড়ি কোনো কিছুই লিখে দেন নি’। অপরদিকে রুমন বলেছেন তিনি মিলনকে ছাড়াতে কোনো টাকাও নেননি।