অর্থনীতি

বাংলাদেশ: ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বলিষ্ঠ অর্থনীতি

By Daily Satkhira

October 28, 2020

অর্থনীতির খবর : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যমতে চলতি অর্থবছরেই গড় মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন বিবিসির নয়া দিল্লি ব্যুরোর সাবেক প্রধান মার্ক টুলি।

পাঠকদের জন্য কলামটির সারমর্ম তুলে ধরা হলো-

আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে ভারতের গড় মাথাপিছু আয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটি যেন ছাই থেকে উঠে আসা এক ফিনিক্স পাখির মতো। এই ছাই রেখে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা।

১৯৭১ সালে সেনা তাণ্ডবের পর পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করে আমি স্বচক্ষে এসব দেখেছি। ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে গ্রামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে ছিল। এর আড়াই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশিরা। এরপর আসলো শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড আর ক্ষমতার জন্য সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে লড়াইয়ের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

নতুন জাতিটি আন্তর্জাতিকভাবে অপমানিত হলো। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অবজ্ঞা করেছিলেন। তবে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটিকে এখন অনেক সংস্থাই উন্নয়নের মডেল হিসেবে মনে করে।

অবশ্য এতে বাংলাদেশের অতিগর্বিত হওয়ার কিছু নেই। দেশটির ২০ শতাংশ মানুষ এখনও অতিদরিদ্র। তাদের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে কমদামি টেক্সটাইল রপ্তানি ও বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই বছর রেমিট্যান্স ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। টেক্সটাইল খাত চরম প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও অস্থির।

বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে দু’টি বিষয় সাহায্য করেছে, আর সে দু’টিই ভারতের জন্য ভিন্ন। প্রথমটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণের ইচ্ছা এবং তার সঙ্গে পরামর্শ। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে আমি বলেছিলাম, প্রচুর পরিমাণে বিদেশি সহযোগিতা বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সংকল্পকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

এখন পেছনে তাকালে দেখা যায়, এতে বাংলাদেশের উপকারই হয়েছে। কারণ, এর মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট রাজনীতি একপাশে রেখে সরকারকে দাতাদের পরামর্শ অনুসরণে বাধ্য করেছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং বেসরকারিকরণকে দরিদ্রবিরোধী হিসেবে দেখা হবে- এমন আশংকা সত্ত্বেও ঢাকা বেসরকারিকরণের পথেই হেঁটেছিল। বিপরীতে, বেসরকারিকরণ নিয়ে ভারত অনেক বেশি দ্বিধান্বিত।

দ্বিতীয়টিও ভারতের মতো নয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। এর অনন্য উদাহরণ হচ্ছে, বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা বিল্ডিং রিসোর্সেস অ্যাক্রস কমিউনিটিস (ব্র্যাক)। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ব্র্যাক এখন বিশ্বের বৃহত্তম দাতব্য সংস্থা। এর কর্মসূচি চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য পর্যবেক্ষিত পথ দেখায়, যা ৪৫টি দেশের এনজিও গ্রহণ করেছে।

এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ প্রতিরোধ করার মতো রাজনৈতিক শক্তি দিয়েছে। এই সহযোগিতা উভয় দেশকেই অনেক অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে কাজ করতে সক্ষম করে তুলেছে।

উদাহরণস্বরূপ, মোদি দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে গেলেন। রেল ও বাস যোগাযোগ আরও গভীর হয়েছে। আগরতলা ও আখাউড়ার মধ্যে ১২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, যা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে আরও সংক্ষিপ্ত রুট সরবরাহ করবে।

তবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারণায় বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি যদি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক বিবেচিত হয়, তবে এই অমায়িক বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।