নিজস্ব প্রতিনিধি : জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কমিয়ে চাকুরির অভিযোগ উঠেছে আশাশুনির কুন্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ৮ম শ্রেণির সনদপত্র নিয়েও রয়েছে জালিয়াতির অভিযোগ। এঘটনায় বুধহাটা ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মমতাজ বেগমসহ এলাকাবাসী তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত দপ্তরী শিবপ্রসাদ সরকার উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া গ্রামের মৃত. সুধাংশু শেখর সরকারের পুত্র। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৭ নভেম্বর উভয়পক্ষকে বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশ দেয় শিক্ষা অফিস। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিদ্যালয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ৩ কর্মকর্তা উপস্থিত হলে উভয়পক্ষের তর্কবির্তকের কারনে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তারা। এলাকাবাসী জানান, উল্লেখিত শিবপ্রসাদ গত ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ কুন্দুড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কমিয়ে উক্ত পদে চাকুরি পেছেন। এমনকি বয়স কমিয়ে তিনি বড় ভাই হয়েও ছোট এবং ছোট ভাই উত্তম কুমার সরকার হয়েছেন বড় ভাই। শিবপ্রসাদ সরকার ৩ ভাই বোনের মধ্যে সে মেঝ এবং উত্তম ছোট। শিবপ্রসাদের বর্তমান জাতীয়পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম সাল ১৯৮৩। অথচ তার পিতা মারা যান ১৯৭১ সালে। যার স্বাক্ষী এলাকার বয়োবৃদ্ধরা। পিতার মৃত্যুর ১২ বছর পর কিভাবে তার জন্ম হলো এটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। শিবপ্রসাদ এপর্যন্ত প্রায় ৩ বার তার জাতীয়পরিচয়পত্র পরিবর্তন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন ভলিউম বইয়ে দেখা গেছে শিবপ্রসাদের নামের স্থানে ফ্লুট মেরে কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও সে সময় নাকি শিবপ্রসাদের ভাগ্নি রবীন্দ্র নাথ ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধনের তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বে ছিলেন। এবিষয়ে আশাশুনি উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সেলিম বলেন, আমরা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য বিদ্যালয়ে এসেছিলাম। প্রাথমিকভাবে উভয় পক্ষের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত জানাতে পারবো। বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান আ ব ম মোসাদ্দেক বলেন, আমি শুনেছি অভিযুক্ত শিবপ্রসাদ ৩ ভাই বোনের মধ্যে মেঝ। তার ছোট ভাই উত্তম কুমার সরকার। কিন্তু চাকুরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে তার ভাগ্নি রবীন্দ্র নাথের সহযোগিতায় ভোটার আইডি কার্ড একাধিকবার পরিবর্তন করেছেন। বয়স কমানোর ফলে বড় ভাই কাগজপত্রে হয়েছেন ছোট, আর ছোট ভাই হয়েছেন বড়। শিবপ্রসাদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ছোট আর উত্তম কুমার আমার বড় ভাই। আমি কোন জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করিনি এবং আমার পিতা ১৯৮৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র একবার পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রথম বার ৮ম শ্রেণির সনদপত্রের সাথে বয়সের মিল না থাকায় ২০১১ সালে পরিবর্তন করা হয়। পি এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত শিবপ্রসাদ ড্রাইভিং লাইন্সের জন্য ৮ম শ্রেণির একটি সনদ চাইলে আমি পূর্বের প্রধান শিক্ষককের রেজিস্ট্রার খাতা দেখে তাকে সনদপত্র প্রদান করি। আমি সে সময় বুঝতেও পারিনি যে শিবপ্রসাদ এধরনের কাজে সনদটি ব্যবহার করবে। সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, এলাকাবাসী সকলেই জানেন। শিবপ্রসাদ বড় আর উত্তম ছোট। কিন্তু ২০১৩ সালে ভাগ্নি রবীন্দ্রের মাধ্যমে জালিয়াতি বয়স কমিয়ে চাকুরিতে যোগদান করে। কুন্দুড়িয়া গ্রামের ৮৬ বছর বয়সী বৃদ্ধ মোসলেম সরদার বলেন, আমরা জানি শিবপ্রসাদের পিতা সুধাংশু সরকার ১৯৭১ সালে মারা যান। তখন আমার বয়স প্রায় ২৫ বছর। একই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ গোপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, শিবপ্রসাদের পিতা সুধাংশু সরকার ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে মারা যান। সে সময় আমি একপুত্র সন্তানের জনক ছিলাম। আমাদের সামনে তার ৩ সন্তানের জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে মেয়েটা বড়। আর দুই ভাইয়ের মধ্যে শিবপ্রসাদ বড় এবং উত্তম ছোট। সে সময় আমরা শিবপ্রসাদ কে ফটিক নামে ডাকতাম। কুন্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরশিদা খাতুন বলেন, তার যে সব নিয়োগ হয়। সে সময় আমি ছিলাম না। গত কয়েকমাস পূর্বে জানতে পারলাম কেউ একজন তার বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিসে এধরনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই শিক্ষা অফিসারগণ ১৭ নভেম্বর বিদ্যালয়ের তদন্তে আসেন। এর বেশি আমি কিছুই জানি না।