সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পিপি এড. আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে আইনজীবী ও গ্রামবাসির পৃথক মানববন্ধন

By daily satkhira

November 23, 2020

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আব্দুল লতিফ এর অনিয়ম দূর্ণীতি ও সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহণ, প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবীকে পুরস্কৃত করে পূণরায় অতিরিক্ত পিপি নিয়োগ, পরীক্ষীত নেতা কর্মীদের বঞ্চিত করে স্বাধীনতা বিরোধীদের সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতিবাদে আইনজীবী ও গ্রামবাসি পৃথক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে ও কামারবায়সা গ্রামবাসির ব্যানারে সোমবার সকাল ১০টায় জজ কোর্টের শহীদ মিনার পাদদেশে পৃথক কর্মসুচি পালিত হয়। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক পিপি অ্যাড. ওসমান গণি, এড. আবু রায়হান, এড. সাহেদুজ্জামান সাহেদ, সাবেক অতিরিক্ত জিপি অ্যাড. নওশের আলী প্রমুখ। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পৃথক মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আব্দুল লতিফের ভাইপো মোজাম্মেল হক, আকবর আলী, নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা রওশান আলী, মুক্তিযোদ্ধা রুস্তুম আলীর স্ত্রী রাজেয়া বেগম। আইনজীবী বক্তারা বলেন, বর্তমান জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ ওরফে খাটাল লতিফ পিপিশিপ দেওয়ার নাম করে ১৫ জন আইনজীবীর কাছ থেকে মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। পিপিশিপ দেওয়ার নাম করে অহেতুক কালক্ষেপণ করায় টাকা ফেরৎ চাইলে তাদেরকে হেঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আব্দুল্লাহ আল মামুন সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। টাকা ফেরৎ না পাওয়ায় অ্যাড. সায়েদুজ্জামান বাদি হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় প্রতারিত অপর দু’ আইনজীবী সাক্ষী হয়েছেন। ৮৪ হাজার টাকা প্রতাররণা ও দু’ লাখ টাকা প্রতারণার পৃথক অভিযোগে লতিফের নিজ গ্রাম দক্ষিন কামারবায়সার নজরুল ইসলাম ও আকবর আলী বাদি হয়ে লতিফের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আকবর আলী জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেছেন। বিডিআর এ চাকুরি করাকালিন তিনি দূর্ণীতির দায়ে বহি®কৃত হন । বিডিআর এ চাকুরি করা কালিন যে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন তা যথাযথ নয়। ওই সনদ যাঁচাই এর জন্য কয়েকজন আইনজীবী আইন মন্থ্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। ২০০২ সালে কলারোয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আইনজীবী অ্যাড. জিল্লুর রহমান আসামীপক্ষে অবস্থান নেওয়ার তৎকালিন পিপি অ্যাড. ওসমান গণি তাকে বহিষ্কার করলেও বর্তমান পিপি তাকে পিপিশিপ দিয়ে পুর®কৃত করেছেন। তার বিরুদ্ধে বহু নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ছাড়া ঘুষ দূর্ণীতির বিনিময়ে তিনি স্বাধীনতা বিরোধী আইনজীবীদের পিপিশিপ দিয়েছেন। এসব নিয়ে আইনজীবীরা প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি দিলে তাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত বছরে তিন কেজি সোনা পাচার মামলায় এক আসামীকে জামিন করতে বিচারকের সাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠলে আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে তাকে বিচারক ক্ষমা করে দেন। শহরের রসুলপুরের জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান ডাবলুর স্ত্রী বিপাশার পক্ষে আইনজীবী হওয়ার সুবাদে তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে নিজ বাড়ির পাশে ব্যাংক কর্মকর্তা মারুফ হোসেনের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া রেখে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিবাদ করায় ডাবলুকে কুপিয়ে জখম করেছে লতিফ। এ ঘটনায় ডাবলু বাদি হয়ে শুক্রবার থানায় এজাহার দিয়েছেন। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে লতিফের নির্দেশে তার ছেলে রাসেল এর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রোববার দুপুরে বড় ভাই আহাদ, ভাবী সেলিনা, ভাইপো তোফাজেজ্ল, মজনু ও মোজাম্মেলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। তারা বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের নজরুল ইসলাম ও মোজাম্মেলসহ কয়েকজন বলেন, বিয়ের পর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর অন্যত্র থাকেন। ছোট ভাই আলমগীর হোসেন মালয়েশিয়ায় থাকে। আলমগীরের মা জরিনা খাতুন বাড়িতে একা থাকার সুবাদে লতিফ ও তার ছেলে রাসেল রেউই গ্রামের রেক্সোনা খাতুনকে মোবাইলে বিয়ের নাটক সাজিয়ে রেক্সোনাকে মায়ের ঘরে তুলে দেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় লতিফ ও রাসেল রেক্সোনার সহযোগিতায় মারপিট করে মা জরিনাকে বাড়িছাড়া করেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে আলমগীরের সঙ্গে পুলিশ কথা বললে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে আলমগীরকে ব্লাক মেইল করে তার বিদেশী টাকা আত্মসাতের লক্ষ্যে লতিফ ও রাসেল এ নাটক মঞ্চস্ত করেছে। জরিনাকে বাড়িতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে চাচা আকবর আলীর নামে রেক্সোনাকে দিয়ে থানায় মিথ্যা ধর্ষণ মামলা(জিআর-৮০০/১৯ সদর) করায় লতিফ ও রাসেল। যদিও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ঘটনা সঠিক নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা রুস্তুম আলীর ছেলে আরিজুল ইসলাম পিপি আব্দুল লতিফের ছেলে রাসেলের কথামত গাজার ব্যবসা করতে রাজী না হওয়ায় তার বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে ১০০ গ্রাম গাজা রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে সীমান্তে তিন কেজি গাজাসহ দু’জন আটক হওয়া মামলায় আরিজুলকেও আসামী করিয়ে দিয়েছে লতিফ ও তার ছেলে রাসেল। এ হেন দূর্ণীতিবাজ ও জাল সনদে পিপি থাকা আব্দুল লতিফ অবিলম্বে পিপিশিপ থেকে পদত্যাগ না করলে বা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার না করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরাজয় হবে। তবে এ ব্যাপারে জজ কোর্টের পিপি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে গত ২৬ অক্টোবর শহীদ মিনার পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেন তার ভাল কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওসমান গণি ও সাহেদুজ্জামানসহ একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।