নিজস্ব প্রতিনিধি : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরায় পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। কাকডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন। এবার সাতক্ষীরা পৌরসভায় বিভিন্ন দলের মোট ১০জন মেয়র প্রার্থী বেশ জোরে শোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই দলীয় সমর্থ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সমর্থন না পেলে প্রচারণা চালানো প্রার্থীদের মধ্যেই অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করেও জামায়াত ইসলাম দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। যদিও তার স্বাতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার দিচ্ছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামীলীগের মূল মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাহাদৎ হোসেন। এছাড়াও জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যো¯œা আরা, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকা এবং প্রবাসী মাহমুদুল আলম বিবিসিও আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করে নিজ নিজ সমর্থকদের দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে বর্তমান মেয়র সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাজকিন আহমেদ চিশতী। জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীকে মাঠে দেখা না গেলেও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল হুদা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়াও গত পৌর নির্বাচনের উল্লেখ্যযোগ্য ভোট পাওয়া সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠুও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে পৌর নির্বাচন সম্পন্ন নিয়েও রয়েছে সংশয়। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে ডিসেম্বর মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্নের সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু শীত মৌসুমে করোনার প্রভাব বাড়লে নির্বাচন পিছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় দেশের যেসব পৌরসভায় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে সাতক্ষীরার নাম নেই। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে মাঠ চষে বেড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে অনেক প্রার্থীই শেষ সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামীলগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন না পেয়ে যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন তাকেই সমর্থন দিবেন বলেও প্রচার রয়েছে। তবে হঠাৎ করে সাতক্ষীরার রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠা জামাতের সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং মেয়র পদে প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। জামায়াতের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচারণা না চালালেও রাতে এবং ভোরে বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট পৌঁছে দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক এর পিতা সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র মরহুম শেখ আশরাফুল হক। অন্যদিকে শাহাদাৎ হোসেন গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন। এখন কে নৌকা প্রতীক পাবেন এটা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা পৌরসভায় কাজের নামে অনেক অনিয়ম হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেকই কাজ করেনি। আমরা অযুহাত নয়, কাজ চাই। যিনি কাজ করতে পারবেন। আমরা তাকেই নির্বাচিত করবো। সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, সাতক্ষীরা পৌরবাসী একজন স’ যোগ্য মেয়র চায়। যিনি পৌরসভাকে ঢেলে সাজাবেন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবেন, জলাবদ্ধতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিবেন। সর্বপরি আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবেন। এমন একজন ব্যক্তিকেই পৌর পিতা হিসেবে প্রত্যাশা করেন পৌরবাসী। ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আহছান বলেন, প্রায় সারা বছরই আমাদের এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকে। পৌর কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে উদাসীন। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব না নিয়ে নিরব থাকেন। যে প্রার্থী আমাদের জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবেন আমরা তাকেই নির্বাচিত করবো। এবিষয়ে মেয়র প্রার্থী শেখ আবু নাসের বলেন, আমি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে সকল ভেদাভেদ ভুল সকলকে নিয়ে একসাথে কাজ করবো। অন্যদিকে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমি গতবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছিলাম। এবারও মনোনয়ন পেলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো এবং সাতক্ষীরা পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তর করবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসা সাতক্ষীরা জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের করতে প্রাণ বাঁচাতে হবে পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পৌরসভাকেই নিতে হবে। এছাড়া শুধু রাস্তাঘাট নির্মাণ করতেই হবে না। নির্বাচিত হতে পারলে পৌরসভার সৌন্দয্য বর্ধন করা, পৌর প্রতিষ্ঠান এবং পৌর সম্পত্তি গুলোর সঠিক ব্যবহার করে একটি আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবো। এবিষয়ে জামায়াতের প্রার্থীদের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।