নিজস্ব প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কালীতলা গ্রামের এনাজউদ্দিন মোল্লার মেয়ে জরিনা । ১৫ বছর বয়সে ৪৫ বছর আগে বিয়ে হয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথরঘাটা গ্রামের ওয়াজেদ আলী মণ্ডলের সঙ্গে। স্বামী নিজের প্রতিষ্ঠান নিজাম অপেরার মাধ্যমে পুতুল নাচ পরিচালনা করতেন। বিয়ের পর স্বামীকে সাহায্য করতেই নিজে জড়িয়ে পড়েন পুতুল নাচের সঙ্গে। নিজাম অপেরার পাশপাশি জরিনা আদি দীপালী, মহামিলন ও পারুল অপেরাসহ বিভিন্ন যাত্রাপালায় অভিনয় করে প্রশাংসা কুড়িয়েছেন। নাচ দেখিয়েছেন বিভিন্ন ব্যালে গ্র“পে। পুতুল নাচানোর দক্ষতার কারণে সরকারিভাবে তিনি থাইল্যাণ্ড ও ব্যাংককে গেছেন। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরষ্কার। ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক তাকে দিচ্ছেন সরকারি ভাতা। বৃহষ্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে শহীদ মিনার পাদদেশে বসে সাংবাদিক পরিচয় পেতেই দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে জরিনা বলেন, এখন তার বয়স ৬০। পুতুল নাচিয়ে দীর্ঘ জীবন সংগ্রামের একপর্যায়ে ১৯৮৬ সালের ১৭ মে ৩৯৮৫ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে মোকছেদ আলী পাটনী, তার বোন আহলাদী বিবি, আছিরন বিবির কাছ থেকে এসএ ১২৩ নং খতিয়ানের ১৩৯৬ দাগ থেকে সাড়ে তিন শতক ও ১০৪৩ খতিয়ানের ১৩৯৮,১৩৯৯ ও ১৪০০ দাগ থেকে সাড়ে সাত শতক জমি মোট ১১ শতক জমি কেনেন জরিনা দম্পতি। প্রায় সাড়ে সাত শতক জমিতে বসত বাড়ি বানালেও সাড়ে তিন শতক জমিতে ডোবা ছিল। তাতে মাছ চাষ করতেন জরিনার পরিবার। একই গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে বাবর আলী, ছলেমান মণ্ডল, লোকমান মণ্ডল, বদর আলী ও জহিরউদ্দিন ১৯৬৮ সালের ১৩ এপ্রিল একই এলাকার মোহাম্মদ আলী পাটুনিসহ ১২ জনের কাছ থেকে ২৩৫১/৬৮ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে ২৬ শতক জমি কিনেছেন এবং তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে দাবি করে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর। তার (জরিনা) সাড়ে তিন শতক ডোবা ভরাট করে সেখানে বাড়ি তৈরির হুমকি দেয় সৈয়দ আলীর ছেলেদের ওয়ারেশগন। নিরুপায় হয়ে তিনি ও তার ওয়ারেশগণ বাদি হয়ে গত বছরের ১৩ নভেম্বর সৈয়দ আলীর সন্তানদের ২১জন ওয়ারেশদের বিবাদী করে সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে মামলা (১৯৩/১০)দায়ের করেন। জরিনা বেগমের আইনজীবী অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি জরিনার পক্ষে মামলা পরিচালনার ভার পাওয়ার পর তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে ২৩৫১/৬৮ নং কাল্পনিক দলিল ব্যবহার করে বিবাদীরা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ১৯৯০ সালে এটেসটেশনে তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে। সাতক্ষীরা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ২৩৫১/৬৮ নং দলিল সার্চ করে জানতে পারেন যে ওই দলিল আদৌ সৈয়দ আলীর পাঁচ ছেলের নামে নয়। দাগ, খতিয়ান, মৌজাও সঠিক নয়। ওই দলিলের গ্রহীতা কলারোয়া উপজেলার ঝিকরা গ্রামের মোমরেজ দালালের ছেলে ইন্তাজ আলী। দাতা হলেন নাবালক আজগার আলীর পক্ষে অভিভাবক পিতা হামেদ আলী মণ্ডল ও তার ছেলে ছলেমান মণ্ডল। মৌজা- ঝিকরা, খতিয়ান-৭২৭ ৪২৬ ও ৪৩২ দাগে যথাক্রমে ১৬ শতক ও ছয় শতক মোট ২২ শতক জমি। বিবাদীগণের এক আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ওই জমিতে পুলিশ ও একটি মানবাধিকার সংগঠণের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সৈয়দ আলীর পাঁচ ছেলের নামে ভূয়া দলিল মূলে তাদের ওয়ারেশরা জরিনার ডোবা ভরাট করে সেখানে গায়ের জোরে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ যাতে বাধা দিতে না পারে সেজন্য দা নিয়ে মহড়া চালাচ্ছেন বিবাদীরা। গত মঙ্গলবার তিনি পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠণের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আদেশ খারিজ চেয়ে আবেদন করেছেন। শুনানী শেষ হলেও গত বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত আদেশ জানতে পারেননি। জরিনা বলেন,মামলা পরিচালনা করতে যেয়ে তিনি, তার ছেলে ও শরীকগণ দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলা করতে যয়ে তিনি পুতুল নাচে ব্যবহৃত ৯০ হাজার টাকা মূলের ১৪ বান টিন, ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ২০০ পিস প্লাস্টিক চেয়ার বিক্রি করে ফেলেছেন। এমনকি এখন তার এক বেলা জোটে তো এক বেলা খাওয়া জোটে না। তিনি তার মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করে শেষ জীবনে নিজের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি জানান।#