ফিচার

সাতক্ষীরায় তুচ্ছ ঘটনায় যুবলীগের সাবেক সভাপতিকে পুলিশের অমানবিক নির্যাতন!

By Daily Satkhira

December 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা শহরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে মোটর সাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে বচসার এক পর্যায়ে জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এক ব্যবসায়িকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফরিদ হোসেন ও তার তিন সহযোগী পুলিশ কর্মকর্তা সোমবার দুপুর ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত শহরের টাউন বাজার তিন রাস্তার মোড় ও কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রেখে এ নির্যাতন চালান। টাউন বাজারের নোমান ফাস্ট ফুডের মালিক বাচ্চু হোসেন জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি তার দোকান খোলার সময় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফারিদ হোসেন তার দোকানের একাংশ জুড়ে মোটর সাইকেল রাখেন। দোকান খোলার সমস্যা হবে বলে আপত্তি করলেও সাদা পোশাকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সস্ত্রীক পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উজ্জল বস্ত্রালয়ে চলে যান। এ সময় তিনি উপরে যেয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবারো মোটর সাইকেলটি সরানোর কথা বললে ওই পুলিশ দম্পতি রেগে যেয়ে তাকে মারতে আসেন। এ সময় তিনি তার দোকান মালিক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুর ভাই লিটনকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে নীচে চলে আসেন। উজ্জল বস্ত্রালয়ের কর্মচারি সালাউদ্দিন জানান, দোকান মালিক শেখ সাদেক হোসেন উজ্জল ওই পুলিশ কর্মকর্তার মোটর সাইকেলটি সরানোর জন্য অনুরোধ করে তার কাছে চাবি চান। এতে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা উজ্জলকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার পায়ে ধরে ক্ষমা চান। এ সময় চলে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই লিটন। ঘটনা জানতে চাইলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে লিট্ন চলে যাওয়ার পর সেখানে চলে আসেন জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুলফিকার হোসেন উজ্জল। বস্ত্র ব্যবসায়ী উজ্জ্বলকে মারপিট করার প্রতিবাদ করায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকেও মারতে যান। অবেশেষে যুবলীগ নেতা উজ্জল, ব্যবসায়ী উজ্জল ও পুলিশ দম্পতি নীচে নেমে আসার পর কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য মোস্তাক আলী ঘটনাস্থলে চলে আসেন। প্রায় একইসাথে ফাঁড়ির পাশে ছোট প্রাইভেট কার রেখে চলে আসেন ডিবি পুলিশের তিন সদস্য। পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছে এত বড় সাহস কার বলতে বলতে ডিবি পুলিশের প্রাইভেট চালিয়ে আসা ওই পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে লাঠি বের করে ব্যবসায়ি উজ্জল ও যুবলীগ নেতা উজ্জলকে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। এ সময় কিল, চড় ও লাথি মারেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ক্রমশঃ লোক সমাগম হতে থাকায় দু’ উজ্জলকে মারতে মারতে টেনে হেঁচড়ে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের আটক রেখে দ্বিতীয় দফায় বেধড়ক পেটানো হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে স্থানীয়রা ফাঁড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে। ঢুকতে না পেরে তারা ফাঁড়ি ঘেরাও করে। সদর থানার একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যুবলীগ নেতা উজ্জলকে ছাড়া হলেও আটক রাখা হয় ব্যবসায়ী উজ্জলকে। প্রায় এক ঘণ্টা পর তার মা’সহ স্বজনরা যেয়ে ব্যবসায়ী উজ্জলকে ছাড়িয়ে আনেন ও পরে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী সিবি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপরপরই পুলিশ ঘটনার প্রমাণ লোপাট করতে তাদের দোকনের সিসি ক্যামেরায় বিশেষ অংশ খুলে নিয়ে চলে যায়। কাটিয়া মাস্টারপাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান ও তার ভাই আমিনুর রহমান বলেন, তার ভাই যুবলীগ নেতা জুলফিকার হোসেন উজ্জলকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরপরই পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুঁটে আসেন। তারা তাড়াতাড়ি করে সদর হাসপাতাল থেকে উজ্জলের ছাড়পত্র নিয়ে নেয়। তারা তাকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে সিবি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তারা আপত্তি করেন। তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ রাজি হয়। একপর্যায়ে জেলা পুলিশের একটি মাইক্রোবাসে করে উজ্জলকে তুলে জোর করে সিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি করার সময় মেডিকেল সার্টিফিকেট বা চিকিৎসাপত্র নিতে পারবে না বলে সিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দু’ভাইয়ের কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ভর্তির পরপরই পুলিশ কর্মকর্তারা দোষী উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বহন করার কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। এ সময় ব্যবসায়ী উজ্জলকেও চিকিৎসার জন্য সিবি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডান হাতে রক্তাক্ত জখম ব্যবসায়ী উজ্জলকেও বিষয়টি নিয়ে আরে বেশিদূর না যাওয়ার জন্য বলেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শী সালাউদ্দিন, বাচ্চু হোসেন, সাহেব আলী, পলাশ শেখসহ কয়েকজন জানান, একটি মোটর সাইকেল সরিয়ে রাখার অনুরোধ করাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য যে তান্ডব চালালো তা যে কোন বর্বরতাকেই হার মানায়। যুবলীগ নেতা জুলফিকার হোসেন উজ্জল বলেন, তাদের উপর পুলিশ যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি জেলা যুবলীগের শীর্ষপর্যায়ে থেকে যেভাবে নির্যাতিত হলেন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কি ঘটে তা জানতে কারো বাকী নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় প্লাটফর্মে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শেখ সাদিক হোসেন উজ্জল বলেন, পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে ব্যবসা করার মানসিকতাটাই হারিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রেও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলম চৌধুরী জানান, বিষয়টি দূঃখজনক। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি উভয়পক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে দোষী পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার মহোদয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আরো জানান।