আব্দুল জলিল : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুই গাছা গ্রামের আকলিমা খাতুন ২০১৪ সালে ্একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির সদস্য হয়েছেন। প্রতি মাসে সঞ্চয় টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পায়নি। আবার অডিট অফিসার এসে বলে গেছে তার নামে ১০ হাজার টাকার ঋণ উঠানো হয়েছে। ঋণ নেওয়া সম্পর্কে কিছুই তার জানা নেই। একই গ্রামের কামরুজ্জামান জানালেন সমিতি কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাইও বোনের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বৃদ্ধ নাসের সরদার জানালেন তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কি ভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হল ? আর কে উঠালো এই টাকা ? এসময় রিক্তা খাতুন বললেন তার নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। আহাদ আলী প্রতিবেদককে জানান, তাদের স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে এই প্রতারকদের কাছে ঋণের টাকা দেয়। মনিরুজ্জামান জানান একটি বাড়ি একটি খামার সরকারি প্রতিষ্ঠান। তার সদস্য বই কেন অফিসের লোকজনদের কাছে থাকবে ? আর এভাবে কেন সদস্যদের নামে টাকা তুলে পকেট ভর্তি করবে অফিসাররা। এসময় আলী হোসেন, হামজের আলী জানালেন তারা ঋণ নিয়ে ছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করেছেন। তবে অফিসে জমা হয়নি। এমনই অভিযোগ করলেন তৈয়েব আলী, পারভীন খাতুন, হাছিনা খাতুন, নাজমা খাতুন, আবেদা সহ অসংখ্যা সদস্য। একই অভিযোগ করলেন বাশদহা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন। তার নামে ও তার মায়ের ন্ামে কে বা কারা এই অফিস থেকে ঋণ নিয়েছে যার কোন কিছুই তার জানা নেই। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসার আসার পরে গ্র্াহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের গ্রাহকদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এই প্রতিবেদক যান সদর উপজেলা অফিসে। অফিসের লোকজনদের সাথে কথা বলতেই বেড়িয়ে আসে গ্রাহকদের ভোগান্তি আর অনিয়মের কাহিনি। অফিসের কর্মরত অফিসাররাই আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আতœসাৎ করেছেন। সদস্যদের কাগজ পত্র জালজালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন অসাধু এই অফিসাররা। গ্রাহকের নিকট থেকে সঞ্চয় ও ঋণের টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন। অনুসন্ধানে জানাযায়,সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২০১৪ সালে শুরু হয় একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় আমার বাড়ি আমার খামার। সরকারী ভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই সমিতি। বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১২ হাজার সদস্য রয়েছে।এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার সদস্যের টাকা তছনছ করেছে পূর্বের অফিসাররা। সেই অডিট অনুযায়ী ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা খোয়া গেছে প্রকল্পের গ্রাহকদের। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা অফিসার। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমম্ময় কারি মেহেদী হাসান. জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব, সুপার ভাইজার রফিকুল ইসলাম,ও শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেেেছ কতৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ফৌজদারি মামলার দায়েরের প্রস্তুুতি নিচ্ছে কতৃপক্ষ । বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমম্ময় কারি মেহেদী হাসান জানান, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দূর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব জানান, তিনি ৫৩ লাখ টাকার মত নিয়েছেন।এই টাকা বাড়ির কাজে ব্যবহার করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবী করা হচ্ছে । তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের সিনিয়র অফিসার বিশ্বজিত সরদার জানান, বৈকারি, কুশখালী, বাঁশদহা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ইতি মধ্যে ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দিয়েছে প্রধান অফিস। তাদের নামে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই টাকা উদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে কিছু এলাকায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে ।