জাতীয়

‘দেলুর দুর্গ’ অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিলেন মেয়র তাপস

By Daily Satkhira

December 09, 2020

অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর সব অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। শুরুতে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা এবং হামলার ঘটনা ঘটলেও পিছু হটেনি সংস্থাটি। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ডিএসসিসি মালিকানাধীন এই মার্কেটে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান উচ্ছেদ করতে মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের নেতৃত্বে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে অভিযানে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান, এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ এবং তানজিলা কবির ত্রপা। তাদের সঙ্গে চার প্লাটুন পুলিশ ও ৫০ জন শ্রমিক এবং দুটি বুলডোজার ছিল। কিন্তু অভিযান শুরুর আগেই উচ্ছেদে বাধা দেন এবং বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা।

দুপুর দেড়টায় পুলিশ ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এ সময় ইটপাটকেল ছুড়েন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ পিছু হটে। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। ব্যবসায়ীদের ইটের আঘাতে জনকণ্ঠের চিত্রসাংবাদিক জীবন ঘোষসহ ডিএসসিসির দুজন উচ্ছেদ শ্রমিক আহত হন। এ সময় অন্তত সাত রাউন্ড কাঁদানেগ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই মার্কেটের উত্তর পাশ থেকে তিন শতাধিক দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মার্কেটটিতে অভিযান চলতে দেখা গেছে। এমন অবস্থায় ফুলবাড়িয়া সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় বা নগর ভবনের ঠিক দক্ষিণ পাশে এই বিপণি-বিতানটির অবস্থান। নগর প্লাজা (এ ব্লক), সিটি প্লাজা (বি ব্লক) এবং জাকের প্লাজা (সি ব্লক) নিয়ে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২। নকশাবহির্ভূত দোকানের কারণে এসব প্লাজার ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে ওই তিনটি প্লাজা বা মার্কেট এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু। তার নেতৃত্বেই অবৈধ এসব দোকান তৈরি করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন জনের কাছে কয়েকশ কোটি টাকায় দোকানগুলো বিক্রি করেন তিনি। এই টাকার ভাগ ডিএসসিসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পকেটেও গেছে। এভাবে ফুলবাড়িয়া এলাকায় একক ‘রাজত্ব বা দুর্গ’ গড়ে তোলেন তিনি। কেউ তার কার্যক্রমে বাধা দেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে দেলুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। অভিযোগ রয়েছে, দেলুর ওই অনিয়মের সঙ্গে ফিরোজও সরাসরি জড়িত ছিলেন।

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের অভিযোগ, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় (এক বছর আগে) নকশাবহির্ভূত এসব দোকান বৈধ করতে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন তারা। দোকানগুলো থেকে ডিএসসিসি এতদিন ভাড়াও নিয়েছে। এখন কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই দোকান উচ্ছেদ করার জন্য এসেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান জানান, বিপণি-বিতানের শৌচাগার, পার্কিং, লিফটের জায়গা ও মানুষের হাঁটার পথে এসব দোকান তৈরি করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের আগে দোকান মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেয়ার পর এই বিপণি-বিতানের নকশাবহির্ভূত দোকান এবং এর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে একটি কমিটি গঠন করেন। করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি বিপণি-বিতানে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে এবং সেগুলো উচ্ছেদের সুপারিশ করে।

অভিযান চলাকালে নগর ভবনে ডিএসসিসি মেয়র তাপস বলেন, নকশাবহির্ভূত দোকান বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। আজ ফুলবাড়িয়া মার্কেট দিয়ে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

একে একে ডিএসসিসির অন্যান্য মার্কেট থেকেও নকশাবহির্ভূত দোকান অপসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।