ভিন্ন স্বা‌দের খবর

৭২ বছর পর হাতে প্রেমপত্র!

By Daily Satkhira

May 14, 2017

বাবা অ্যালেন কুক আর মেয়ে মেলিসা মিলে বাড়ি সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন। হঠাৎ করেই তাঁরা ছাদের দিকে একটা ফাটল দেখতে পেলেন। ওই জায়গায় পৌঁছে যখন মেরামতকাজে হাত লাগাতে যাবেন, তখনই ঘটল একটা বিস্ময়কর ঘটনা। বেরিয়ে এল এমন এক চিঠি, যার মধ্যে হৃদয়ে নাড়া দেওয়া সুন্দর একটি উষ্ণ প্রেমের গল্প লুকিয়ে। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির ওয়েস্টফিল্ডের।

অ্যালেন কুক সিএনএনকে বলেন, ‘হলুদ রঙের মলিন একটি চিঠির খাম। চিঠিটি খামে বন্দী ছিল, কখনো খোলা হয়নি। আমার জামাতা খামের মুখ ছিঁড়ে চিঠিটি যখন পড়তে শুরু করে, অবিশ্বাস্য লাগছিল। চিঠিটি যে নারী লিখেছেন, তিনি তাঁদের অনাগত সন্তানের বিষয়ে স্বামীকে জানাচ্ছিলেন।’

পত্রটি লেখা হয় ১৯৪৫ সালের ৪ মে। ভার্জিনিয়া নামের এক নারী তাঁর স্বামী রফ ক্রিস্টোফারসেনকে এটি লিখেছিলেন। রফ তখন নরওয়ের নৌবাহিনীর নাবিক ছিলেন। খামের ওপরে লেখা ছিল, প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিতে না পারলে প্রেরকের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিন। চিঠিটি রফের কাছে যায়নি, ফেরত এসেছিল ভার্জিনিয়ার কাছেই। সেই থেকে খামে বন্দী পত্রটি ওভাবেই পড়ে ছিল। বেরিয়ে এল সপ্তাহ খানেক আগে।

তবে চিঠিটি প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন মেলিসা। ইন্টারনেটে খুঁজতে থাকেন রফ ক্রিস্টোফারসেন নামের ব্যক্তিকে। একপর্যায়ে এই নামের একজনের ফোন নম্বর পান তিনি। ফোন করেন সেই নম্বরে। ফোন ধরেন রফের ছেলে। রফের ৬৬ বছর বয়সী ছেলে থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি তখন অফিসে ছিলাম। কেউ একজন আমাকে ফোন করলেন। তিনি আমার নাম নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়লেন। কারণ, আমার বাবার নাম আর আমার নাম একই। মেলিসা আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি কোথায় বড় হয়েছি। আমি তাঁকে বললাম। এসব শুনে তিনি আমাকে চিঠির বিষয়টি বললেন। এভাবেই সবকিছু খোলাসা হলো।’

ভার্জিনিয়া যখন চিঠিটি লিখেছিলেন, তখনো জন্ম হয়নি ছেলে রফ ক্রিস্টোফারসেনের। তারপরও মায়ের লেখা তাঁর কাছে খুবই বিশেষ বলে মন্তব্য ছেলে রফের। কারণ, মা আর তাঁদের কাছে নেই। ছয় বছর আগে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।

চিঠিতে ভার্জিনিয়া লেখেন, ‘রফ, সূর্যের উত্তাপের মতো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার জীবনে তোমার অর্থ এমনটাই। সূর্যই সবকিছুর নেপথ্যে, আর আমি এ জন্যই আবর্তিত হই।’

৭২ বছর পর স্ত্রীর সেই প্রেমপত্র পেলেন স্বামী রফ ক্রিস্টোফারসেন। ৯৬ বছর বয়সী রফ এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন। ছেলে চিঠিটির কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে অফিস থেকেই ফোনে পড়ে শুনিয়েছেন বাবাকে। স্ত্রীর লেখা প্রেমপত্রে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি, ফিরে যান নিজেদের যেসব প্রেমময় সোনালি দিনে।

সিনিয়র রফ ক্রিস্টোফারসেন বলেন, ‘এতটা বছর পরও আমার জন্য এমন বিস্ময় অপেক্ষা করছিল! চিঠিটি পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। চিঠিটি এখনো টিকে আছে, ভাবতেই আমার অবাক লাগে। আসল ভালোবাসা একেই বলে। আমি ভার্জিনিয়ার ছোঁয়া পাচ্ছি যেন। আপ্লুত হয়ে পড়েছি আমি।’

চিঠি খুলে কাঁদেন তাঁদের সন্তান জুনিয়র রফ ক্রিস্টোফারসেনও। বলেন, ‘এই মা দিবসে মায়ের কথাগুলো আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, কী চমৎকার মানুষ ছিলেন আমার মা। তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসতেন! এর সঙ্গে কিছুর তুলনা হয় না!’

এখন একটা প্রশ্নের উত্তরই বাকি থাকে। সেটা হলো চিঠিটি সেখানে গেল কীভাবে? উত্তরটা হচ্ছে, ভার্জিনিয়া-রফ দম্পতি একসময় নিউজার্সির ওয়েস্টফিল্ডে এই বাড়িটির কাছাকাছি থাকতেন। কোনোভাবে চিঠিটি ওপর থেকে পড়ে অ্যালেন কুকের বাড়ির ছাদের ফাটলে আটকে পড়ে।